NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, মে ১৪, ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার -প্রেস সচিব শিগগিরই মিসরের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের হামলায় ১১ সেনা নিহত, আহত ৭৮: পাকিস্তান আইএসপিআর কেন দাম কমে গেছে সুপারস্টার নয়নতারার পর্দা নামলো সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের, বিজয়ী গিগাবাইট টাইটানস সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম যাচ্ছেন ড. ইউনূস ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি প্রিন্সের বৈঠক শেষ জীবিত মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দিলো হামাস সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে বাংলাদেশ
Logo
logo

কর্ণফুলী টানেল আয়ের চেয়ে ব্যয় তিনগুণ বেশি, বছরে ঋণ শোধ ৩০০ কোটি টাকা


খবর   প্রকাশিত:  ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১০:০১ পিএম

কর্ণফুলী টানেল আয়ের চেয়ে ব্যয় তিনগুণ বেশি, বছরে ঋণ শোধ ৩০০ কোটি টাকা

প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল এখন ঘাড়ের ওপর বোঝা হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ সময় টানেল থাকে ফাঁকা। নেই যানবাহনের চাপ। নির্মাণের আগে জরিপে ২০ হাজারের বেশি গাড়ি চলবে বলা হলেও এখন গড়ে দৈনিক সাড়ে চার হাজার গাড়ি চলছে।

দিনে গড়ে আয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকার মতো। অথচ দিনে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এর বাইরে চীনের ঋণ পরিশোধের দায় তো রয়েছেই। 

 

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরেই শুরু হয়েছে ঋণ পরিশোধ।

বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা টানেলের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

 


 

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টানেলের উপযোগী সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। পরিবহনব্যবস্থা না করে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হলে এর পাশে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে।

এসব কারখানার পণ্যবাহী যানবাহন টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে। যদি তা না হয়, টানেল একরকম অব্যবহৃত থেকে যাবে।’

 

শুধু কর্ণফুলী টানেলই নয়, ক্ষতির মুখে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রকল্পও। ৩৯ হাজার কোটির পদ্মা রেল প্রকল্পেও লাভজনক হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মাতারবাড়ী ৫১ হাজার কোটির বিদ্যুৎ প্রকল্পে শুধুই অপচয় এবং দোহাজারী-ঘুমধুম রেলের সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকাও জলে গেছে।

 

 


 

পদ্মা রেল প্রকল্প
সড়ক যোগাযোগে পদ্মা সেতু বিল্পব ঘটালেও পদ্মা রেল সেতুর ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পুরোই জলে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সহজলভ্য বাস, ভাড়া অপেক্ষাকৃত বেশি, সময়মতো ট্রেন না ছাড়াসহ কয়েকটি কারণে ট্রেনের চেয়ে বাসকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ফরিদপুর ও ভাঙ্গার মানুষ। ফলে ওই পথে লোকসান গুনছে রেলওয়ে। নতুন এই রেলপথে দৈনিক ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করার কথা থাকলেও চলছে মাত্র ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, রেলের অনেক প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর মাধ্যমে জনগণের কতটা লাভ হবে বা অর্থনৈতিকভাবে এই প্রকল্প থেকে কতটা সফলতা আসবে তা চিন্তা করা হয়নি। ফলে এত বড় বিনিয়োগ করেও অর্থনীতিতে তার কোনো ভূমিকা নেই।


 

মাতারবাড়ী ৫১ হাজার কোটির বিদ্যুৎ প্রকল্পে শুধুই অপচয়
জ্বালানির নির্ভরযোগ্য সংস্থান ছাড়াই ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা আমদানির অনিশ্চয়তায় যার উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের একটি পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে ও আরেকটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বললেও এখনো এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করতে পারেনি। গড়ে এর উৎপাদন ৯০০ মেগাওয়াট।

এদিকে প্রকল্প পরিচালকের দুর্নীতিতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে কয়লা আমদানি। আগস্টের পর আর কয়লা আমদানি হয়নি। তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। তবে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন গত জুলাই মাসে। যদিও সরকারের হস্তক্ষেপে পরে তুলে নেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।

সম্প্রতি মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে একে ‘প্রকল্প বিলাস’ বলে অভিহিত করেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হচ্ছে না। মূল প্রকল্পের ধারণা অনুসারে গভীর সমুদ্রবন্দর, শিল্প-কারখানা, রেল ও সড়ক সংযোগ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।


 

দোহাজারী-ঘুমধুম রেলের সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিফলে
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকায়। গত ডিসেম্বরে নতুন এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ১০ মাস ধরে ট্রেন চলাচল করলেও প্রত্যাশিত সংখ্যায় যাত্রী না পাওয়ায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনিক ২৬টি ট্রেনের পরিবর্তে বর্তমানে মাত্র ছয়টি ট্রেন চলাচল করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ট্রান্স এশিয়ান রেল যোগাযোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও এর উদ্দেশ্য ছিল অবাস্তব। মায়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তের অংশের পুরোটাই পাহাড়ে ঘেরা। এই পাহাড় ভেদ করে মায়ানমারের মূল অংশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ অবাস্তব স্বপ্ন।


 

পরিকল্পনা কমিশনের রেল উইংয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও এখানের শিল্প-কারখানা চালু হলে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আয় বাড়বে। যদিও এ জন্য সময় লাগবে। তত দিন রেলকে এই রুটে লোকসান গুনতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। গল্প বলা হয়েছিল অতিরঞ্জিত করে। তবে প্রকল্প শেষ হলেও এই এলাকাগুলোতে এখনো তেমন কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি।’