শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকের বামপন্থী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। দিশানায়েকে পার্লামেন্টে নিজ জোটের আসনসংখ্যা বাড়াতে আগাম নির্বাচন দিয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তায় শ্রীলঙ্কায় চলেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা ফলাফলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট ১৯৬টি আসনের মধ্যে এনপিপি ১৩৭টি আসন পেয়েছে।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের আসনসংখ্যা ২২৫। এর মধ্যে ১৯৬ আসনে ২২টি নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোট হয়, বাকি ২৯টি ‘জাতীয়ভিত্তিক আসন’। এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো পাবে ১৯৬ আসনে প্রাপ্ত ভোটের অংশ অনুযায়ী।
এদিকে দিশানায়েকের জোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসার সামাগি জানা বালাওয়েগায়া পার্টি ৩৫টি আসনে জিতেছে। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সমর্থিত নিউ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র তিনটি আসন।
দিশানায়েকে বৃহস্পতিবার তার ভোট দেওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই নির্বাচন শ্রীলঙ্কার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা একটি শক্তিশালী পার্লামেন্ট গঠন করা এবং আমার বিশ্বাস, জনগণ আমাদের এই সুযোগ দেবে।
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এসেছে, সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে, আশা করি অবশ্যই এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে।’
দিশানায়েকে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েই ২৩ সেপ্টেম্বর ক্ষমতা গ্রহণের পরদিনই পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে এনপিপি প্রায় ৬২ শতাংশ বা প্রায় ৭ মিলিয়ন ভোট পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে দিশানায়েকে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন, যা ইঙ্গিত করে তিনি সংখ্যালঘুদের থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন।
শ্রীলঙ্কায় সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের দলকে সমর্থন করে জনগণ, বিশেষ করে যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
২২ মিলিয়ন জনগণের দেশ শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকটে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র ঘাটতির কারণে দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেশটিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছিল, ফলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পদত্যাগ করতে হয়।
সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লড়াই করছে দেশটি। দেশের ২৫.৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, যা গত চার বছরে বেড়েছে। এর আগে রাজাপক্ষের উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করলেও অর্থনৈতিক সংকট এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
সূত্র : রয়টার্স