ঢাকা: ঈদযাত্রায় সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কিংবা হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কাছ থেকে ‘মুভমেন্ট পাস’ নেয়া মোটরসাইকেল আরোহীদের বাধা দেবে না পুলিশ। এ পাস দেখিয়েই তারা নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা করতে পারবেন। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও মোটরসাইকেলে বাড়ি যেতে পারবেন তারা।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মোটরসাইকেল চালানো একজন মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত অধিকার। এতে বিধিনিষেধ দেয়ায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই মুভমেন্ট পাস দেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুরে মুভমেন্ট পাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বিআরটিএর নীতিমালা আমরা অনুসরণ করব। আমাদের কাছে মুভমেন্ট পাসের ফরম্যাট করা আছে। কেউ যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন অবশ্যই তাকে পাস দেবো।

হাইওয়ের পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম সরকার বলেন, হাইওয়ে পুলিশের ৫ জন আঞ্চলিক পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারের কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস নেয়া যাবে। পাস ছাড়া মহাসড়কে কাউকে চলতে দেয়া হবে না।

এদিকে, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, বিআরটিএর পরিপত্রে বলা আছে- এক জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেল অন্য জেলায় চালানো যাবে না। তবে যৌক্তিক ও অনিবার্য প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। কেউ যদি যৌক্তিক কারণ নিয়ে মুভমেন্ট পাস নিতে আসেন তাহলে তাকে পাস দেয়া হবে। পাস নিয়ে তিনি তার গন্তব্যে যেতে পারবেন।

যেভাবে মুভমেন্ট পাস পাওয়া যাবে

কেউ যদি ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ জেলা (যেমন- খুলনা/যশোর/কুষ্টিয়া/রাজশাহী) যেতে চান তাহলে প্রথম যে জেলা পার হবেন সেই জেলা থেকে সংশ্লিষ্ট ফরম্যাটে গন্তব্য, রুট, ভ্রমণের কারণ, তারিখ ও সময়, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, আরোহীর সংখ্যা ও রাইডারের মোবাইল নম্বর দিয়ে মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। মুভমেন্ট পাসে অনুমোদনকারী অফিসার স্বাক্ষর করবেন। এর একটি কপি রাইডারের কাছে থাকবে, অন্যটি অফিস কপি হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে থাকবে।

এদিকে, বুধবার (৬ জুলাই) পুলিশের ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়।

আলোচনা সভায় বলা হয়, ‘যৌক্তিক কারণ’ দেখালে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চালকদের বাধা দেবে না পুলিশ। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি যেতেও পারবেন তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, মোটরসাইকেল চালানো একজন মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত অধিকার। এতে বিধিনিষেধ দেয়ায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঈদের সময় প্রতিটি মোটরসাইকেল আটকে তার বাড়ি যাওয়ার কারণ জানার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না তারা। ঈদযাত্রার সময়ে ১ থেকে ২ মিনিট রাস্তা বন্ধ থাকলে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা তৈরি হয়। বৃহস্পিতবার (৭ জুলাই) থেকে ঢাকায় অন্তত ৮টি চেকপোস্টে পুলিশ থাকবে। সেখানে থাকবে ট্রাফিক পুলিশও।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবর রহমান বলেন, দূরপাল্লার মোটরসাইকেল যাতায়াত বন্ধ রাখাটা যৌক্তিক। তবে একজন মানুষের মোটরসাইকেল চালানো তার ব্যক্তিগত অধিকার। এ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে একজন মানুষকে প্রয়োজনীয়তার জন্যই মুভ করতে হতে পারে। সাধারণত বাইক নিয়ে বাইরেও অনেকেই জরুরি কাজে বের হতে পারেন। অসুস্থতা থাকতে পারে, সাংবাদিকরা তাদের কাজে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হতে পারেন, করোনাসহ বিভিন্ন রোগের আক্রান্তদের জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়েও কেউ বাইকে বের হতে পারেন। তবে আদেশ যেহেতু হয়েছে, আমরা আদেশটি ফলো করব।

‘তবে কেউ যদি যৌক্তিক ও সন্তোষজনক কারণ দেখাতে পারেন এবং যদি আমাদের কাছে মনে হয় সেটি লজিক্যাল, তাহলে তা অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব। সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করতে গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাতে হবে। এজন্য আমরা বিআরটিএর কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। তাহলে যৌক্তিকভাবে বিষয়টি কার্যকর করতে পারব এবং মানুষের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হবে।’

যারা নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন, আইনগতভাবে এটি কোনো দোষ না। আমরা মানুষকে নিবৃত করব।

এর আগে, গত রোববার (৩ জুলাই) সড়ক পরিবহণ সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, ঈদের আগে ও পরে সাতদিন এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। বন্ধ থাকবে মহাসড়কে রাইড শেয়ারিংও। ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে।

সরকারি এ নির্দেশনা পরিপালনে ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর প্রবেশমুখে প্রতিটি মোটরসাইকেল আটকানো হবে। তবে রাজধানী থেকে আশপাশে ঢাকা জেলার অধীন কোনো গন্তব্যে চলাচলকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।