ঢাকা: দেশে বিভিন্ন সময়ে ত্রাস সৃষ্টি করা স্বৈরাচারী শাসন ও উগ্রবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন জানিয়ে নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক তথ্যচিত্র শেয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বুধবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় তিনি এ ভিডিও শেয়ার করেন। এই ভিডিওতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাসও উঠে আসে।
ভিডিওর বর্ণনায় বলা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার পরও বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে আরো অনেক বছর।
তার শেয়ার করা ভিডিওতে বলা হয়, নিজেদের অপশাসনকে বৈধতা দিতে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার মতো পদ্ধতি অবলম্বন করে দেশের গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করে মোশতাক, জিয়া ও এরশাদ।
এতে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাই তোষণ করে দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। আবারও পাকিস্তানের গোলামি করার আকাঙ্ক্ষায় দেশকে ডোবাতে থাকে দিনের পর দিন।
শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম।
বাংলাদেশের দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্ব যেমন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তেমনি স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে মানবিক সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে দলটি। বাঙালি জাতির প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত, নিরাপত্তা ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য।
বাংলাদেশের জন্ম ও স্বৈরাচার ও উগ্রবাদীদের শোষণ থেকে গণমানুষকে রক্ষা ও উন্নয়ন ও বিকশিত রাষ্ট্র হিসেবে বিকশিত হওয়ার পেছনে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দিকনির্দেশক হিসেবে অভিহিত করা হয় মুক্তিসংগ্রাম ও অগ্রযাত্রার নেতৃত্বদানকারী এ দলকে।
স্বাধীনতার আগে ১৯৫৮ সালের পর থেকে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ভয়ে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দল রাজনীতি বন্ধ করে রেখেছিল, তখনো দলীয় সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে দেশে স্বৈরশাসন চালু করে ঘাতকরা।
দেশের আপামর মানুষকে স্বৈরাচারের দুর্বিষহের হাত থেকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে আসেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিশ্রুতি ও সাহস দেন তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে স্বৈর শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ফিরে পায় বাংলাদেশ। কিন্তু স্বৈরাচারের পতনের পর শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের আগ্রহ ছিল না।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের ওই নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও সূক্ষ্ম কারচুপির জন্য প্রায় ৫০টি আসনে সামান্য ভোটে হেরে যায় আওয়ামী লীগ। এরপর যুদ্ধাপরধীদের দলকে নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। ফলে বিরোধী দলের আসনে বসতে হয় আওয়ামী লীগকে। কিন্তু বিরোধী দলের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রচলনের জন্য বিএনপি সরকারপর ওপর চাপ অব্যাহত রাখেন শেখ হাসিনা।
নির্যাতন-নিপিড়নের শিকার আওয়ামী লীগ
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে উঠতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ যাতে মাঠে নামতে না পারে সে জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বাস্তুহীন করে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাকে দুবার গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাকে আটক করে প্রায় তিন মাস গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন বন্দি ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর থেকে তাকে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার ও গৃহবন্দি হন। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বাসভবনে অন্তরীণ করা হয়।
১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গলি বর্ষণ করে। এরপর ৩০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী শহীদ হন। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে তাকে লক্ষ্য করে দুইবার গুলি করা হয়। জনসভার শেষে আবারও তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।
১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। অবাক করার মতো বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ যখন সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করছিল তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দুর্নীতিগ্রস্ত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কারণে অভিযুক্ত পুত্র তারেক রহমানকে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য ব্যস্ত সময় কাটান।
এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে তারেক রহমানের বিচার স্থগিত করে বিদেশ না পাঠালে নির্বাচনী অংশ নেবেন না বলে গো ধরেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ সালে দেশ জুড়ে ভয়াবহ নাশকতার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করে বিএনপি-জামায়াত।