বড়দিন, যাকে বিশ্ববাপী ক্রিসমাস বলা হয়ে থাকে, নিউইয়র্ক এবার তা পালিত হলো তুষার পাত ছাড়াই।
প্রবাদ আছে যে, স্নো এন্ড ক্রিসমাস কাম টুগেদার ইন নিউইর্য়ক। সাদা সাদা থোকা থোকা তুষারে আবৃত হবার কারনে যাকে হোয়াইট ক্রিসমাসও বলা হতো। মূলধারার সংবাদে এসেছে, ‘সান্তা সেইজ নো হোয়াইট ক্রিসমাস’। অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্মমতে ক্রিসমাস উদযাপনে সান্তার যে প্রভাব রয়েছে, সেই সান্তাই নাকি নিউইর্য়কে এবার হোয়াইট ক্রিসমাস চান নাই, তাই তুষার পাত হয়নি। খৃষ্টান বিশ্বাস মতে মধ্যপ্রাচ্যের জেরুজালেম শহরের ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পবিত্র শহর বেথেলহেমে, আজ যেখানে চার্চ অব নেটিভিটি বিদ্যমান, সেখানেই শেষ নবী হজরত মোহাম্মদের (সা) জন্মের অন্তত ৫৩৩ বছর পূর্বে নবী ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম হয়। নবী মোহাম্মদের (সা) জন্ম যেভাবে হিজরী চন্দ্রমাস রবীউল আউয়ালের ১২ তারিখ বলে প্রসিদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে, তদ্রূপ ভাবে ২৫শে ডিসেম্বরই নবী ঈসার জন্মদিন ছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে ও ব্যাপক ধুম আয়োজনে তা পালিত হয়।
দুর্ভাগ্যবশত ও দু:খজনক ভাবে যদিও নবীদের জন্মদিন পালনে অনীহা প্রকাশকারী কিছু চরমপন্থী ১২ই রবীউল আউয়াল কি সত্যি সত্যিই নবী মোহাম্মদের (সা) জন্মদিন ছিল বলে বিভেদ ও ষড়যন্ত্র সৃষ্টি করতে চান, তদ্রুপ ভাবে তথা কথিত এসব অতি উৎসাহীরা ২৫শে ডিসেম্বর কি সত্যিই ঈসা আঃ এ দুনিয়াতে আগমন করেছিলেন বলে সোসাল মিডিয়া ও বয়ান-বক্তৃতায় প্রশ্ন উত্থাপন করে বিবেদ সৃষ্টি করার পঁয়তারা করে থাকেন। আন্তধর্মীয় বিজ্ঞজনরা মনে করেন, ধর্মে ধর্মে এরাই ধর্মীয় লেবাসধারীরা বিভেদ সৃষ্টিকারীর দল। যাদের থেকে কেবলই সাবধান থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ক্রিসমাস পালনকারী খৃস্টান ও মীলাদুন্নবী উদযাপনকারী মুসলমান এদেরকে বয়কট করে চলা মানেই হলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা। কেননা, নবী মোহাম্মদের জন্মের দিন শয়তান দু:খ করে যেভাবে কেঁদেছিল, ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের সময়ও ইবলীস তাঁর মা হজরত মারইয়ামের (আ) প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল। ধর্মে বিভ্রান্তি ও লেবাসধারী ভদ্রবেশী বিবেদ সৃষ্টিকারীদের সকল ষড়যন্ত্রকে পিছনে ফেলে পবিত্র মাহে রবীউল আউয়াল আগমনের সাথে সাথে মাসটির ১২ই তারিখ সহ মাসব্যাপী নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী ও যুগোপযোগী ও উন্নত মানানুযায়ী বিবেকবান ও সত্যিকারের শান্তিপ্রিয় নবীর উম্মত দাবীদার মুসলমানরা যেভাবে মীলাদের আয়োজন করে থাকেন, হজরত ঈসার (আ) অনুসারী খৃস্টান জাতি ডিসেম্বরের ১লা তারিখ থেকেই নিজ নিজ বাড়িঘর ও গীর্জাগুলোতে মনোরম ও দৃষ্টি নন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে থাকেন। কেননা এ মাসেই একদিন আসবে সেই আনন্দের ‘বড়দিন’ ২৫শে ডিসেম্বর। যেভাবে মুসলমানদের কাছে আসে ‘মহাদিন’ ১২ই রবীউল আউয়াল। বড়দিন ও মহাদিনের আনন্দ উদযাপনের ধুম ছাড়া যেনো ধর্মদুটোর আধ্যাত্মিকতা সচলই থাকনা…।
নিউইয়র্কে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শহরের উডসাইড-কুইন্সে অনুষ্ঠিত এখানের বাংলাদেশী-আমেরিকান খৃষ্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত ইউনাইটেড বেংগলী লুথারান চার্চ অব আমেরিকায় গত ২৫শে ডিসেম্বর, ‘২৩ সোমবার ব্যাপক আডম্বরে বড়দিনের অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। চার্চের স্বনাম ধন্য পাদ্রী রেভা. মি. জেমস রয় কম্যিউনিটির আন্তধর্মীয় ইমাম, পন্ডিতসহ বিশিষ্টজনদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা কন্যা মেহজাবিনও বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
ঈদে মীলাদুন্নবী অর্থাৎ মহাদিনে আমেরিকায় অবস্থিত ৩.৫ মিলিয়ন মুসলমানের পক্ষে ক্রিসমাসের মত করে ১২ই রবীউল আউয়ালের ইংরেজি তারিখ মে মাসের ১ম সোমবার ফেডারেল হলিডে কেম্পেইনের প্রস্তাবক ও অগ্রদূত মোহাম্মদী সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কাজী কায়্যূম নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশী মুসলিম কম্যিউনিটির পক্ষে সেখানে ছিলেন বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথির একজন। ইমাম কায়্যূম বলেন, আজ সোমবার, ২৫শে ডিসেম্বরের শুষ্ক ক্রিসমাস হলেও এই দিনই নবী মোহাম্মদেরও (সা) জন্মের দিন ছিল। আমি নিউইয়র্কের বাংলাদেশী-আমেরিকান মুসলিম কম্যিউনিটির পক্ষ থেকে আমার বাংলাদেশী-আমেরিকান খৃস্টান ভাইবোনদের মীলাদে ঈসার (আ) শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। তিনি বলেন, ৫৭০ খৃষ্টাব্দে মে মাসের ১ম সোমবার মক্কায় বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে শেষ নবী হজরত মোহাম্মদের (সা) শুভাগমন ঘটেছিল। আজ ২৫শে ডিসেম্বর বডদিনে আমরা যাঁর জন্মদিন পালন করছি, তিনিই নবী মোহাম্মদের (সা) আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ইমাম কাজী কায়্যূম বলেন, ইনশাল্লাহ, বড়দিনের মত করে আমরাও আমেরিকার ৩.৫ মিলিয়ন মুসলমান সরকারী ছুটিতে একদিন ঈদে মীলাদুন্নবী তথা ‘মহাদিন’ পালন করবো। সবাইকে সেদিনের আমি অগ্রিম আমন্ত্রণ দিয়ে রাখছি। তিনি বলেন, আমরা যারা মহানন্দে আমেরিকায় আজ ক্রিসমাস উদযাপন করছি, ঠিক এই সময়ে হজরত ঈসার (আ) জন্মভূমি পার্শ্ববর্তি শহর মুসলমানদের রক্তে হচ্ছে রন্জিত। আমরা সেসব হানাহানির অবসান চাই। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদাও একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সবাইকে দিনটির শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে আজ এই দিন পালিত হচ্ছে মহা সমারোহে। ধর্মে ধর্মে সহাবস্থানের মডেল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির শীর্ষে অবস্থান করছে আজকের বাংলাদেশ, যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কনে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপ্রসারিত দূরদৃষ্টির বদৌলতে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির মধ্যে ড. থমাস দুলু রায় ও ব্রুকলীন সেন্ট পিটার্স চার্চের আমেরিকান পাদ্রী রেভা. বেংকী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সহ সকলেই চার্চের পাদ্রী রেভা. জেমস রায় ও চার্চ সদস্যদের আন্তরিক ও বন্ধু সুলভ আতিথেয়তার প্রসংসা করেন। শিশুদের মধ্যে ক্রিসমাস গিফট বন্ঠন করেন অনুষ্ঠানে সান্তা হয়ে আসা মি. রোজারিও। বিকেল ২ঃ৩০ টা থেকে অনবরত ৭ঃ৩০ টা পর্যন্ত চলমান অনুষ্ঠানে স্ন্যাক, লাণ্চ ও ডিনার পরিবেশন করেন চার্চের স্বেচ্ছাসেবকগণ। বড়দিনের একটি বড় ক্রিসমাস কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
-ইমাম কাজী কায়্যূম, মোহাম্মদী সেন্টার, জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
নিউইয়র্কে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনে ক্রিসমাস উদযাপন
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৫:০৭ এএম



প্রবাস রিলেটেড নিউজ

প্রবাসী নাগরিকদের উদ্যোগে সিরাজুল আলম খান এর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন

নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসে দার-উল ফোরকান মসজিদের তালা কেটে ডলার চুরি

নিউইয়র্কে নারী উদ্যোগের আলোয় ঝলমল কুইন্স ঈদ বাজার

নিউজ পোর্টাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন আন্তর্জাতিকভাবে তালিকাভুক্ত হলো

২৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কে তিনদিনব্যাপী ‘কৃষ্টি থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’

যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ ধরপাকড় ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা

নিউইয়র্কে নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদের উদ্যোগে খোলা মাঠে ঈদুল আযহার বিশাল জামায়াত অনুষ্ঠিত

যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় উৎসব আমেজে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত