NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
সেই কনস্টেবল পেলেন পিপিএম পদক, দেখা করলেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজারবাইজানকে বিনিয়োগের পাশাপাশি মানবসম্পদ কাজে লাগানোর আহ্বান ‘তারা এখন আমাকে সম্মান করেন’—বেজোস ও জাকারবার্গ সম্পর্কে ট্রাম্প বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক ‘কিং’ শাহরুখের রানি দীপিকা, জমবে কি পুরনো ম্যাজিক মানুষ ভালো সমাধান মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকারকেই-ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমরা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি : শিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের ১৬ ইউটিউব চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ, বিবিসিকেও সতর্কতা কানাডার নির্বাচনে ফের জয় পেয়েছে লিবারেল পার্টি ইরেশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বাঁধনসহ তারকাদের প্রতিবাদ
Logo
logo

বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব খুঁজে বের করতে কমিশন নিয়ে হাইকোর্টের রুল


খবর   প্রকাশিত:  ১৮ নভেম্বর, ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম

বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব খুঁজে বের করতে কমিশন নিয়ে হাইকোর্টের রুল

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে একটি ‘জাতীয় অনুসন্ধান কমিশন’ গঠনের বিষয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সাংবিধানিক চেতনা ও জাতীয় মূল্যবোধ স্বার্থে দ্য কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুযায়ী একটি জাতীয় অনুসন্ধান গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং কমিশন গঠনে নিষ্ক্রীয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রীপরিষদসচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও অর্থসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

দুই বছর আগে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়ার এক রিটে প্রাথমিক শুনানির পর সোমবার এ রুল দেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর দ্বৈত বেঞ্চ। চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রীপরিষদসচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও অর্থসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে এ দাবির পক্ষে উচ্চকিত অনেকেই। তিন বছর আগে ২০২০ সালে ১৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সর্বদলীয় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ড ও কুশীলবদের চিহ্নিত করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবিও তোলা হয় সেদিন।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই বিভিন্ন সময় এ দাবি তুলেছেন। ২০২১ সালে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় যারা জড়িত এবং যারা এ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে ও খুনিদের পাশে ছিল, তারাও সমানভাবে দায়ী। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয়েছে। এ হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদেরও মুখোশ উন্মোচন করা হবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের দুই মাস পরই বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিকদের হত্যাকাণ্ড, অন্তর্ধান নিয়ে কমিশন গঠনের উদাহরণ তুলে ধরে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাসের পক্ষে রিট আইনজীবী মো. আসফাকোজ্জোহা।

ব্রিটিশ ওপনিবেশিক আমলে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান নিয়ে ১৯৫৬ সালের ৫ এপ্রিল ও পরে বিভিন্ন সময় গঠন করা কমিশনসহ ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড, শ্রীলঙ্কার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট সলোমন বন্দরনায়েক হত্যাকাণ্ডের পেছনের কুশীলবদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের উদাহরণ তুলে ধরা হয় রিটে।

গত বছর ১৪ আগস্ট রিটটি শুনানির জন্য উঠলে কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সময় চাইলে আদালত শুনানি মুলতবি রাখেন। পরে কয়েক দফা সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। সর্বশেষ রবিবার (২২ জুনুয়ারি) পর‌্যন্ত নেওয়া সময়ের মধ্যে কমিশন গঠনের বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ, অগ্রগতি জানাতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর সোমবার শুনানিতে ওঠে রিটটি।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল আলিম মিয়া জুয়েল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কয়েক দফা সময় নিয়েও কমিশন গঠনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। আজ শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বরা হয়েছে যে, কমিশন গঠনের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আছে, অচিরেই করে ফেলবে। তখন আদালত বলেছেন, ঠিক আছে আমরা রুল দিচ্ছি, সরকার কমিশন গঠন করে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিলেই হবে। এরপর আদালত রুল জারি করেন।

গত বছর ১১ আগস্ট হাইকোর্টের এক বিচারপতির লেখা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের কাছ থেকেও তাগিদ আসে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সেদিন বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে সামনে থেকে যারা গুলি করেছেন তারা স্বীকার করেছেন যে, আমরা খুন করেছি,। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু কি তারাই এর সাথে জড়িত? নাকি অনেক বড় চক্র এর পেছনে কাজ করেছে, যেটি এখনও উদঘাটন হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কলকাঠি কারা নেড়েছেন তা এটি উদঘাটন হওয়া উচিত।’

এ অনুষ্ঠানেই আপিল বিভাগের বিচারপতি সরকারকে কমিশন গঠন করতে অনুরোধ জানান বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এরপর ১৩ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, কমিশন গঠনের রূপরেখা প্রস্তুত, প্রধামন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সে অনুষ্ঠানে গেল বছরই কামিশন গঠন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।

আগেও কমিশন হয়েছিল

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একদল সেনাসদস্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ইউরোপে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ আটকে দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রবাসে থাকা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং জেল হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যদের আবেদনে যুক্তরাজ্যে এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সমাবেশ থেকে ওঠা দাবিও এ কমিশন গঠনে ভূমিকা রাখে।

কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য স্যার টমাস উইলিয়ামস, সদস্য ছিলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী, শান্তিতে নোবেলজয়ী শন ম্যাকব্রাইড, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য জেফরি টমাস; সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন অব্রে রোজ। ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কমিশন প্রথম বৈঠকে বসে, এরপর সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবেন তারা। এরপর কমিশনের বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে কমিশনের পক্ষে বাংলাদেশে আসতে জেফরি টমাস এবং তার এক সহকারী ভিসার আবেদন করলেও তাদের ভিসা দেওয়া হয়নি। যুক্তরাজ্যের এই কমিশন ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আইনি ও বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব পথে এগোতে দেওয়া হয়নি এবং এর জন্য তৎকালীন সরকারকে দায়ী করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভিসা না পাওয়ায় এই সফর হয়নি। কেন ভিসা দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কিছু জানানোও হয়নি। দূতাবাসে কয়েকবার চিঠি দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।’

‘শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি ১৯৮২ সালে নভেম্বরে র‌্যাডিক্যাল এশিয়া পাবলিকেশনস থেকে বই আকারে প্রকাশ করা হয়। বইটির মুখবন্ধ লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।