NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ১, ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
৫০ কোটির প্রকল্প ২৫ কোটিতেই সম্পন্ন, প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা আলজেরিয়ার সঙ্গে দ্রুত পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করা হবে - স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহান মে দিবস আজ আমি পোপ হতে চাই, এটাই এক নম্বর পছন্দ: ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, ১০ ফ্লাইট বাতিল করলো পিআইএ তিন নায়কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জমজমাট ঢালিউড চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় নিরলস কাজ করছে সরকার - আদিলুর রহমান জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে প্রতিশোধ বাংলাদেশের ট্রাম্পের ১০০ দিন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বদলে যাচ্ছে বিশ্বব্যবস্থা
Logo
logo

তিন নায়কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জমজমাট ঢালিউড


খবর   প্রকাশিত:  ০১ মে, ২০২৫, ০৯:০৫ এএম

তিন নায়কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জমজমাট ঢালিউড

ঢালিউডের ইতিহাসে যুগে যুগে বহু তারকার আবির্ভাব ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের চিত্রটা যেন একটু ভিন্ন। শাকিব খানের একক আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছেন আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদ। অন্তত রোজার ঈদের ছবির নিরিখে সেটা বলাই যায়।

কেবল এবারই নয়, দুই বছর আগেই ‘সুড়ঙ্গ’ করে শাকিবের ‘প্রিয়তমা’কে শক্ত প্রতিযোগিতায় ফেলেছিলেন নিশো। তারও আগে ২০১৮ সালের ঈদে শাকিবের ছবির সঙ্গে লড়ে সুপারহিট ‘পোড়ামন ২’ উপহার দিয়েছিলেন সিয়াম। এবার ঈদে যেমন শাকিবের ‘বরবাদ’-এর সঙ্গে লড়ল নিশো-সিয়ামের ‘দাগি’ ও ‘জংলি’।

 

এই অভিনেতাদের প্রত্যেকেরই অভিনয়ের ধারা আলাদা, দর্শকও তাঁদের আলাদা।

সময় তাঁদের একে অন্যের ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। যেমন পর্দায় তেমন ভক্তদের হৃদয়ে। তাঁদের ফ্যানবেস, জনপ্রিয়তা, অনলাইন অ্যাক্টিভিটি—সবই এখন আলোচনার বিষয়। 

 

বর্তমানে ঢাকাই চলচ্চিত্রের বাজারে এই তিন নায়কের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা শুধু সিনেমার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়; সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে তাঁদের ভক্তদের উত্তেজনা।

ভক্তদের কেউ শাকিব খানকে বলছেন ‘কিং’, ‘সুপারস্টার’ বা ‘মেগাস্টার’। সিয়ামকে বলছেন নতুন সময়ের ‘হিরো’। আবার নিশো ভক্তরা তাঁর অভিনয়ের পরিপক্বতাকে ভাবছেন ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’, কেউ কেউ কেবল তাঁর অভিনয়েই সত্যিকারের শিল্প খুঁজে পান। ঢালিউডের এই তিন ‘নায়ক’ বলয়ের ভেতরে এখন কিভাবে ঘূর্ণি তৈরি হচ্ছে এবং এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি ঢালিউডকে নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে?

 

  • শাকিব খান : কতজন এলো গেল শাকিব রয়ে গেল
    পেছনে ফেলে এসেছেন দুই দশকেরও বেশি সময়। শতাধিক হিট সিনেমা, অগণিত ভক্ত আর ‘কিং খান’ খেতাব নিয়ে শাকিব এখনো একা লড়ছেন ঢালিউডের গৌরবকে ধরে রাখতে।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে মূলধারার একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখা এই তারকা সিনেমা হলের ‘সেফ জোন’। বিভিন্ন সময়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন অনেকেই, সময়ের পরিক্রমায় তাঁদের অনেকেই এখন অতীত। তাঁর সিনেমায় এক ধরনের তারকাসুলভ জৌলুস ও ‘মাস অ্যাপিল’ আছে, যা তাঁর অবস্থানকে বরাবরই রেখেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে আধুনিক সিনেমার ভাষা ও প্রজন্মের মানসিকতা বদলে যাওয়ায় তাঁর জায়গাটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। সময়ের ভাষা পড়ে শাকিবও বদলে নিয়েছেন নিজেকে। ‘শিকারী’ থেকে সর্বশেষ ‘বরবাদ’—সবখানেই নতুন শাকিবকে পেয়েছে দর্শক। আর তাই তিনিই ঢালিউডের একমাত্র ভরসার প্রতীক।

 

কেমন তার ফ্যানবেস?
গ্রাম থেকে জেলা শহর, রাজধানী, ওপার বাংলা কিংবা প্রবাসী বাঙালি—‘শাকিবিয়ান’রা ছড়িয়ে আছেন বিশ্বজুড়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম দেড় দশকে তিনি জয় করে নিয়েছেন জনপদভিত্তিক, গ্রাম-গঞ্জে বিস্তৃত দর্শকের মন। বিগত এক যুগে ক্রমেই তাঁর ভক্ত তালিকায় যোগ হয়েছে ড্রয়িংরুমের দর্শক ও নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা। ফেসবুকে তাঁর ফ্যানস গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছাড়িয়েছে কয়েক লাখেরও বেশি। সিনেমা মুক্তির সময় ভক্তরা পোস্টার নিয়ে মিছিল করে, এমনকি বিভিন্ন সময়ে তাঁর নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধনও করেন। ঘর থেকে বের হয়ে তিনি যেখানেই যান, মুহূর্তেই ভিড় জমে যায়। শ’য়ের কোঠা ছাড়িয়ে হাজারো ভক্তের মিলনমেলা বসে যেন। কখনো কখনো সেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তরক্ষীদের। অন্তর্জালে শাকিবকে নিয়ে যদি সামান্য কটুবাক্যও কেউ উচ্চারণ করেন, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির হয় ‘শাকিবিয়ান’রা। শাকিবকে নিয়ে কিছু লিখতে-বলতে অনেকেই তাই দুবার ভাবেন। এমনই তাঁর ভক্তের ভক্তি। 

তবু প্রশ্ন থেকে যায়। নতুন প্রজন্মের দর্শকের সঙ্গে শাকিবের যোগসূত্র ঠিক কতটা? অনেকে মনে করেন, তরুণদের সঙ্গে ‘রিলেট’ করার জায়গায় কিছুটা ফাঁক রয়ে গেছে তার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হয়তো তিনি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছেন। যার কারণে তিনি সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। সময়োপযোগী গল্প ও চরিত্রে হাজির হয়ে চমকে দিচ্ছেন তরুণদেরকেও। 

GB BARTA অবশেষে ছাড়পত্র পেল শাকিব খানের 'বরবাদ' - GB BARTA

 

  • আফরান নিশো : অভিনয়প্রেমী দর্শকের প্রিয় মুখ
    ছোট পর্দায় নিশোর জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, তাঁর বড় পর্দায় আগমন যেন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। অবশেষে তিনি এলেন এবং জয় করলেন। ‘সুড়ঙ্গ’র দুই বছর পর এলেন ‘দাগি’ হয়ে, দুইবারেই বাজিমাত! প্রমাণ করলেন, ছোট পর্দার অভিনেতারাও বড় পর্দার দর্শকের হৃদয় জয় করতে পারেন। 

 

তার ফ্যানবেস কেমন?
নিশো ভক্তরা তৈরি হয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। টিভিতে তাঁর অভিনীত নাটক দেখে দেখে। তাঁর অভিনয়ে যে আবেগ আর বাস্তবতা থাকে, সেটিই তাদের কাছে যেন মূল আকর্ষণ। ভক্তদের দাবি মেটাতেই এলেন ওটিটিতে, সেখান থেকে বড় পর্দায়। অন্তর্জালে শাকিব খানের মতো তারও রয়েছে একটা বড় ফ্যান গ্রুপ, যারা সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়াতে নিশোকে ঘিরে সরব থাকেন। তাঁর ফ্যানবেস অনলাইনে ব্যাপক শক্তিশালী হলেও, তাঁকে এখনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মননশীল দর্শকের পছন্দ নিশো, যাঁরা সিনেমায় বাস্তবতা ও আবেগ খোঁজেন।

No photo description available.

 

  • সিয়াম আহমেদ : নতুন যুগের প্রতিনিধি
    সিয়াম হতে পারতেন ছোট পর্দার ব্যস্ততম অভিনেতা। নিশ্চিত আয়ের পথ ছেড়ে বড় পর্দার স্বপ্নে বিভোর হলেন তিনি। তিনি যে ভুল করেননি, অভিষেকেই দিলেন তার প্রমাণ। একবার দুইবার নয়, সেই প্রমাণ দিয়েছেন কয়েকবারই। বরাবরই চরিত্র নির্বাচনে তিনি সচেতন। গল্পভিত্তিক ও বাস্তবধর্মী সিনেমায় যেমন তিনি আগ্রহী, তেমনি আগ্রহী ব্যতিক্রমী সব গল্পে। ‘দহন’, ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘দামাল’ বা ‘জংলি’—সবখানেই অনবদ্য সিয়াম। তিনি প্রমাণ করেছেন, নায়কত্ব এখন আর শুধু ‘লুকস’ বা ‘অ্যাকশন’নির্ভর নয়। গল্পের নির্যাস সঠিকভাবে পর্দায় তুলে আনতে পারাটাই আসল।
     
    তার ফ্যানবেস কেমন?
    নগরকেন্দ্রিক ও তরুণ প্রজন্মের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে তাঁর প্রতিটি ছবি বা ভিডিওতেই ভক্তদের উচ্ছ্বাস স্পষ্ট। অনেকে তাঁকে বলেন ‘তারুণ্যের নায়ক’। তবে ২৫ বছর বয়সী পর্দার শাকিব খানের মতো সারাদেশজুড়ে জনপ্রিয়তা বা ফ্যানবেসের বিস্তৃতি এখনও ঘটেনি। এতো অল্প সময়ে সেটা সম্ভবও নয়। তবে ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে!
     

তিন নায়কের দর্শকগোষ্ঠী—প্রতিযোগিতা না সহাবস্থান

এই তিন তারকার মধ্যে ঢালিউডে শাকিব খান যে যোজন যোজন দূর এগিয়ে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শাকিব খান দীর্ঘ রাজত্বের প্রতীক, সিয়াম নতুন যুগের প্রতিনিধি, আর নিশো মজবুত পারফরমারের নাম। আশার কথা হলো, এ ধরনের বহুমুখী প্রতিযোগিতাই ঢালিউডকে ক্রমেই আরো শক্তিশালী করে তুলবে। ভিন্ন স্বাদের সিনেমা, ভিন্ন দর্শকগোষ্ঠী আর ভিন্ন স্টাইল নিয়ে এই তিন তারকা একে অন্যের বিকল্প নন বরং সমান্তরাল।