শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিকে রপ্তানির তথ্য নিয়ে বেশ লুকোচুরি হয়। একই সঙ্গে রপ্তানির তথ্যে গরমিল নিয়েও সমালোচনা হয়। কারণ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিবিএসএর তথ্যে অনেক গরমিল দেখা দেয়। ফলে সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় তিন মাস রপ্তানির কোনো তথ্য প্রকাশ করা হবে না।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এসে তিন মাস পরই রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করল ইপিবি। গতকাল বুধবার ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তাতে দেখ যায়, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের রপ্তানি আয় ৬.৭৮ শতাংশ বেড়ে ৩.৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় ৫.০৪ শতাংশ বেড়ে ১১.৩৭ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০.৮২ বিলিয়ন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ৫.৪৩ শতাংশ বেড়ে ৯.২৮ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৮.৮১ বিলিয়ন। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক খাত ২.৭৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওভেন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.১৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ৪.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৬০ বিলিয়ন ডলারে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৭ মিলিয়ন ডলার।
এখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৮২ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ২৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ের ২১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩২.৫০ শতাংশ বেশি।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ১৮.৫৯ শতাংশ বেড়ে ৮২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের আয় ১৭.৭৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশেষায়িত টেক্সটাইল সেক্টর ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫.৬৪ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ২.০৫ শতাংশ এবং আয় করেছে ৬২ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে আগের সরকারের আমলে রপ্তানি আয় নিয়ে ওঠা বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না।
সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি তথ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা থেকে উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বর্তমানে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। ফলে আশা করা যায়, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না।