ইসিবি চত্বরেও জড়ো হয় কিছু আন্দোলনকারী।
তবে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা মাইলস্টোন কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। বিকেল সোয়া ৪টার পর আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
‘দ্রোহযাত্রা’ থেকে চার দফা দাবি
শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা ‘দ্রোহযাত্রা’য় অংশ নিতে বিকেল ৩টার আগে থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভিড় জমতে থাকে। এরপর কয়েক হাজার মানুষের মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
দ্রোহযাত্রা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চার দফা দাবি তুলে ধরেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, ‘গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে, গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’ এসব দাবি পূরণ না হলে রবিবার আবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সবাই একটা মুক্ত বাংলাদেশের জন্য লড়াই করছে। সরকারের কাছে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। অনেক বিচার জমে আছে। এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে।’
এই কর্মসূচিতে জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বায়তুল মোকাররমে জুমার পর ঝটিকা মিছিল
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা ছাত্র ঐক্য। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে ঝটিকা মিছিল দ্রুত শাহবাগের দিকে যায়। এ সময় মিছিলকারীরা কোটা আন্দোলনে নিহতদের হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
সহনশীলতার পাশাপাশি সতর্ক পুলিশ
গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য হামলা, নাশকতা ও অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মাঠ পর্যায়ে সতর্ক ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্তত ৩০ হাজার সদস্য। সাদা পোশাকে তৎপর ছিলেন গোয়েন্দারাও। তবে যেসব এলাকায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেখানে সহযোগিতা করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের একটি এপিসির (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) সামনের কাচ ও বডিতে লাল রং দিয়ে ‘ভুয়া’ লিখে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশ এখানেও সহনশীল ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে।’
গতকাল উত্তরার সংঘর্ষে একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার সুমন কর জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বা চিকিৎসা নিয়েছে—এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।
ধানমণ্ডিতে শিল্পীদের ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ
গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ করেছেন শিল্পীরা। সমাবেশের শুরুতে ছিল দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন। এরপর পরিবেশন করা হয় ‘আস্থা-অনাস্থা’ শীর্ষক একটি পারফরম্যান্স আর্ট। এই পরিবেশনায় সড়কের ওপর মিছিলের আবহ তৈরি করেন শিল্পীরা। এরপর গুলিবর্ষণ ও রক্তে রঞ্জিত হওয়ার দৃশ্য তৈরি করা হয়। এ সময় মাইকে আন্দোলনে শহীদের নাম ধরে ডাক দিলে একজন করে শিল্পী ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দেন। সংগীতশিল্পীরা উদ্দীপক গণসংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আর ছিল প্রতিবাদী স্লোগান।
সমাবেশে শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হচ্ছে গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়া, কারফিউ তুলে নিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ।
সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন চিত্রশিল্পী মোস্তফা জামান, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার, উন্নয়নকর্মী শারমিন মুর্শিদ, লেখক রেহেনুমা আহমেদ, কবি সাখাওয়াত টিপু ও শিল্পী সুমনা সোমা। আয়োজকদের পক্ষে সমাবেশের বিবৃতিপত্র পাঠ করেন সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও এই সমাবেশে অংশ নেন।