NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০২৫ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের প্রত্যেকের হাতে: প্রধান উপদেষ্টা সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের দিল্লি ক্যাপিটালসে ডাক পেলেন মোস্তাফিজ লন্ডনের মঞ্চে ‘ডিডিএলজে’, চমকে দিলেন শাহরুখ খান জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার -প্রেস সচিব শিগগিরই মিসরের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের হামলায় ১১ সেনা নিহত, আহত ৭৮: পাকিস্তান আইএসপিআর কেন দাম কমে গেছে সুপারস্টার নয়নতারার পর্দা নামলো সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের, বিজয়ী গিগাবাইট টাইটানস
Logo
logo

গণমিছিলে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, দুজনের মৃত্যু


খবর   প্রকাশিত:  ০৫ আগস্ট, ২০২৪, ০১:৩৬ এএম

গণমিছিলে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, দুজনের মৃত্যু

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ঘিরে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাজীবী, শিক্ষক, শিল্পী ও চিকিৎসকদের একাংশ যোগ দেওয়ায় আন্দোলনের পরিধি বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণমিছিলসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর উত্তরাসহ দেশের একাধিক স্থানে বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে খুলনায় একজন পুলিশ সদস্য ও হবিগঞ্জে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়।সুমনএদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল রাতে এই প্ল্যাটফরমের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ এক বার্তায় সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিক্ষোভ মিছিল ও আগামীকাল রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

গতকাল রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে সকাল ১০টা থেকে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

 

জুমার নামাজের পর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৪টার পর মিছিল নিয়ে গিয়ে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে।

সকাল সাড়ে ১১টার পর রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের আফতাবনগর থেকে মিছিল বের হয়। আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে রামপুরা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যারা নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার বিচার এবং আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেয় তারা।

 

বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা মিরপুর-২, অরিজিনাল-১০ ও কাজীপাড়ায় মিছিল করে।

ইসিবি চত্বরেও জড়ো হয় কিছু আন্দোলনকারী।

 

তবে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা মাইলস্টোন কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। বিকেল সোয়া ৪টার পর আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

‘দ্রোহযাত্রা’ থেকে চার দফা দাবি

শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা ‘দ্রোহযাত্রা’য় অংশ নিতে বিকেল ৩টার আগে থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভিড় জমতে থাকে। এরপর কয়েক হাজার মানুষের মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

দ্রোহযাত্রা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চার দফা দাবি তুলে ধরেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, ‘গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে, গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’ এসব দাবি পূরণ না হলে রবিবার আবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সবাই একটা মুক্ত বাংলাদেশের জন্য লড়াই করছে। সরকারের কাছে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। অনেক বিচার জমে আছে। এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে।’

এই কর্মসূচিতে জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বায়তুল মোকাররমে জুমার পর ঝটিকা মিছিল

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা ছাত্র ঐক্য। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে ঝটিকা মিছিল দ্রুত শাহবাগের দিকে যায়। এ সময় মিছিলকারীরা কোটা আন্দোলনে নিহতদের হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

সহনশীলতার পাশাপাশি সতর্ক পুলিশ

গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য হামলা, নাশকতা ও অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মাঠ পর্যায়ে সতর্ক ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্তত ৩০ হাজার সদস্য। সাদা পোশাকে তৎপর ছিলেন গোয়েন্দারাও। তবে যেসব এলাকায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেখানে সহযোগিতা করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের একটি এপিসির (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) সামনের কাচ ও বডিতে লাল রং দিয়ে ‘ভুয়া’ লিখে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশ এখানেও সহনশীল ছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে।’

গতকাল উত্তরার সংঘর্ষে একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার সুমন কর জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বা চিকিৎসা নিয়েছে—এমন কাউকে পাওয়া যায়নি।

ধানমণ্ডিতে শিল্পীদের ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ

গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ করেছেন শিল্পীরা। সমাবেশের শুরুতে ছিল দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন। এরপর পরিবেশন করা হয় ‘আস্থা-অনাস্থা’ শীর্ষক একটি পারফরম্যান্স আর্ট। এই পরিবেশনায় সড়কের ওপর মিছিলের আবহ তৈরি করেন শিল্পীরা। এরপর গুলিবর্ষণ ও রক্তে রঞ্জিত হওয়ার দৃশ্য তৈরি করা হয়। এ সময় মাইকে আন্দোলনে শহীদের নাম ধরে ডাক দিলে একজন করে শিল্পী ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দেন। সংগীতশিল্পীরা উদ্দীপক গণসংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আর ছিল প্রতিবাদী স্লোগান।

সমাবেশে শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হচ্ছে গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়া, কারফিউ তুলে নিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ।

সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন চিত্রশিল্পী মোস্তফা জামান, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার, উন্নয়নকর্মী শারমিন মুর্শিদ, লেখক রেহেনুমা আহমেদ, কবি সাখাওয়াত টিপু ও শিল্পী সুমনা সোমা। আয়োজকদের পক্ষে সমাবেশের বিবৃতিপত্র পাঠ করেন সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও এই সমাবেশে অংশ নেন।