ফয়সাল ছাড়া অন্য যাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে তাঁরা হলেন—শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২০০ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা স্থাবর সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের তিন হাজার ২২৮ বর্গফুট স্থাবর সম্পদ ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি জব্দ করা হয়েছে।
সাত শর বেশি হিসাব খুলে অর্থ লেনদেন
আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় তাঁর নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদ পূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ এনে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে ওই অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং সব শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় ওই লোকজন ছাড়াও আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী, শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের নামে সাত শর বেশি হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৫ সালের ২ জুলাই কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি প্রথম সচিব (কর), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকায় কর্মরত আছেন। তিনি চাকরিতে যোগদান থেকে এ পর্যন্ত অবৈধ ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর/রূপান্তর করেন। তিনি ও তাঁর স্বজনদের নামে দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র; ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং ফিন্যানশিয়াল প্রতিষ্ঠানে ছয় কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা এবং ছয় কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদসহ মোট ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০৮ টাকা মূল্যের বেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এই অর্থ অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁদের বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি ওই অর্থ উপার্জন করেছেন।
শ্বশুরের নামে সম্পদ
কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড থেকে পাঁচ কাঠার প্লট কিনেছেন। ওই প্লট ক্রয়ে ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা মাহমুদা হাসানের ওয়ান ব্যাংক, ইকুরিয়া শাখার হিসাব থেকে দেওয়া হয়েছে। আদিবা ট্রেডিংয়ের (মালিক কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল) শাহজালাল ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার হিসাব নম্বর ৪০০৭-১২৪০০০০০১৯৪ থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড বরাবর এক কোটি টাকা ইস্যু করা হয়। ওই টাকা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের হিসাব থেকে গেলেও সম্পদ অর্জন করেছেন শ্বশুরের নামে।
দুদকের অনুসন্ধান চলাকালেও কিনেছেন প্লট
কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল নিজ নামে ও তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে মোট দুই কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে পাঁচ কাঠার প্লট কেনেন। প্লটের সীমানা চিহ্নিতকরণ খরচ ও নিরাপত্তা ফি বাবদ অর্থ জমা করতে জলসিঁড়ি আবাসন বরাবর ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল জনৈক খন্দকার হাফিজুর রহমানের ওয়ান ব্যাংকের হিসাব থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তিনি এই প্লট কেনেন।
দুদকের তিন সদস্যের একটি টিম কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমলিডার হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন। টিমের অপর দুই সদস্য হলেন—সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ ও উপসহকারী পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট।