স্লোভাকিয়া, ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি দেশে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনের তৃতীয় দিনে ভোটগ্রহণ চলছে। পপুলিস্ট ও অতি ডানপন্থী দলগুলো ২৭ সদস্যের ব্লকে আরো বেশি আসন পেতে চায়।
ইইউ পার্লামেন্টের ৯ জন সদস্য বেছে নেবে লাটভিয়া
লাটভিয়াজুড়ে ভোটকেন্দ্রগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে দেশটির দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতেও ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে ৩৭ হাজারের মতো ভোটার, বা ভোটারদের ১০ শতাংশ বৃহস্পতিবার মাঝরাত অবধি ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করেননি বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
২০০৪ সালে ইইউতে যোগদানের পর এটি মাল্টার পঞ্চম ইউরোপীয় নির্বাচন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি ইউরোপীয় সংসদের চারটি এবং জাতীয়তাবাদী দল দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল।
ভোট যেভাবে হয়
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জন্য ভোট দেওয়া হয় একটি একক ব্যালটে সরাসরি সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে৷ প্রতিটি দেশের জন্য সংসদ সদস্যের সংখ্যা তার জনসংখ্যার আকারের ওপর নির্ভর করে।
ইউরোপীয়রা ২০১৯ সালে শেষ ভোটে ৭৫১ জন আইন প্রণেতাকে নির্বাচিত করেছিল।
পরের বছর ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (এমইপি) সদস্য সংখ্যা ৭০৫-এ নেমে আসে। বর্তমান নির্বাচনের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ১৫ জন অতিরিক্ত সদস্য থাকবেন। ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৭২০ জনে।
স্লোভাকিয়ায় শনিবারের ভোট
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এরই মধ্যে ভোটগ্রহণ চলছে ৫৪ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে। ১৫ মে ফিকোকে হত্যার চেষ্টার এই ঘটনায় স্লোভাকিয়াসহ গোটা ইউরোপ স্তম্ভিত হয়েছে।
ফিকো অসুস্থ শরীরেই একটি প্রাক-নির্বাচন ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি ওই হামলাকারীকে ‘স্লোভাকবিরোধীদের একজন কর্মী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিরোধীরা ‘আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতি’ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
১৪ মিনিটের ভিডিওতে ফিকো বলেছেন, ‘যেকোনো সময়ে এটা ট্র্যাজেডিক হয়ে যেতে পারত।’
ফিকোর দল ইউক্রেনে ইইউর অস্ত্র সরবরাহের বিরোধিতা করেছিল। ব্রাসেলসে ‘যুদ্ধবাজদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল তারা।
এদিকে শুক্রবার কোপেনহাগেন স্কোয়ারে একজন ব্যক্তি ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনকে আঘাত করেন। ইউরোপে একের পর এক রাজনীতিবিদকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে।
‘কিংমেকার’ মেলোনি?
ইতালির কট্টর ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইউরোপীয় কমিশনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক হতে পারেন। তার ব্রাদার্স অব ইতালি (এফডিআই) পার্টি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে লাভবান হতে পারে।
বর্তমান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডেয়ার লায়েন ইউরোপীয় রক্ষণশীল ো সংস্কারবাদী (ইসিআর) গ্রুপের নিশ্চিত ভোটে জয়ী হওয়ার আশায় মেলোনির সমর্থন চেয়েছেন।
প্যান-ইউরোপীয় নরমপন্থী-ইউরোসেপ্টিক ব্লকের নেতৃত্বে মেলোনি ও তার এফডিআই প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যোগ দেবেন।
ইইউর তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ হিসাবে ইতালির ৭২০টি আসনের ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মোট ৭৬ জন প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। ইইউর সমস্ত বামপন্থী দলকে বিরোধী দল হিসেবে পাঠানো মেলোনির লক্ষ্য।
অতি ডান প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের এই রাউন্ডে কেন্দ্রীয়-বাম ও সবুজ দলগুলো অতি ডান ও কেন্দ্রীয়-ডান—উভয়ের কাছেই আসন হারাবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (ইসিএফআর) এই বছরের শুরুতে বেলজিয়াম, ইতালি, ফ্রান্সসহ ৯টি ইইউ দেশে বিজয়ী ইইউবিরোধী দলের সঙ্গে ‘ডানপন্থার প্রতি ঝোঁকের কথা’ জানিয়েছে।
এর ফলে কেন্দ্রীয়-ডান ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি); মধ্য-বাম সমাজতন্ত্রী ও গণতন্ত্রী (এসঅ্যান্ডডি) এবং উদার-কেন্দ্রবাদী রিনিউ ইউরোপের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। চরম ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী আইডেন্টিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আইডি) এবং এর তুলনায় কম ডানপন্থী কিন্তু ইউরোসেপ্টিক ইউরোপীয় রক্ষণশীল ও সংস্কারবাদী (ইসিআর)—দুয়েরই বড় আশা রয়েছে।