NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
সেই কনস্টেবল পেলেন পিপিএম পদক, দেখা করলেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজারবাইজানকে বিনিয়োগের পাশাপাশি মানবসম্পদ কাজে লাগানোর আহ্বান ‘তারা এখন আমাকে সম্মান করেন’—বেজোস ও জাকারবার্গ সম্পর্কে ট্রাম্প বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক ‘কিং’ শাহরুখের রানি দীপিকা, জমবে কি পুরনো ম্যাজিক মানুষ ভালো সমাধান মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকারকেই-ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমরা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি : শিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের ১৬ ইউটিউব চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ, বিবিসিকেও সতর্কতা কানাডার নির্বাচনে ফের জয় পেয়েছে লিবারেল পার্টি ইরেশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বাঁধনসহ তারকাদের প্রতিবাদ
Logo
logo
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদের দাম দুটি প্যারাডো-গাড়ির সমান!

প্রয়াত মুকুল বোসকে ফিরে দেখা


খবর   প্রকাশিত:  ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩২ এএম

প্রয়াত মুকুল বোসকে ফিরে দেখা

সোহেল সানি: আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ এখনো চোখে ভাসছে। বলছি ওয়ান ইলেভেনে সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল গ্রেফতার। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। হায়! তিনিও গ্রেফতার! সমাসীন এবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের আসনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। হঠাৎ তিনি উধাও। শোনা গেলো লন্ডনে যাবার উদ্দেশ্যে আছে। শেখ রেহানার পরামর্শে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন তিনি। এবার ভারপ্রাপ্তের আসনে সমাসীন মুকুল বোস, তিন নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস। মিডিয়া সরগরম করে, সংস্কারের পক্ষে আগুনঝরা সব বুলি আউড়ে। কাদের-আশরাফ সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে কোন স্রোতে না। শেখ হাসিনা গ্রেফতার হবেন হবেন গুজব গুঞ্জন চারদিকে। ভারপ্রাপ্ত হিসাবে মুকুল বোস সর্বেসর্বা। বাকশাল আওয়ামী লীগে একীভূত হলে মুকুল বোস রাজ্জাক পন্থা ছেড়ে আমুপন্থী হয়ে ওঠেন।

প্রেসিডিয়ামের সর্বাপেক্ষা জাঁদরেল মেতা আমির হোসেন আমু তখন। দোর্দণ্ডপ্রতাপ। সেনাসমর্থিত সরকার প্রধানমন্ত্রী আমির হোসেন আমু উপপ্রধান মন্ত্রী আঃ মান্নান ভূইয়া, এসব মুখরোচক খবর বেরুচ্ছে রাজ্জাক, মতিয়া গ্রুপ আমু বলয়ের বাইরে। সাংগঠনিক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় সংস্কারপন্থীরা জড়ো হলে তার গুরুত্ব বাড়ে। মুকুল বোসকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্তের আসন চাই সাবেরের। গোয়েন্দা সংস্থা প্রস্তাব নিয়ে গেলো মুকুল বোসের বাসায়। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়তে হবে। স্বাস্থ্যগত কারণে নয়তো বিদেশে চলে যেতে হবে। দেখেন না শীর্ষ নেতারা কারাগারে। ভয় প্রদর্শন করা হলো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর নির্যাতনের সেই বিভীষিকার কথা স্মৃতিতে ভাসলো তার। ওস্তাদ (আমু) -কে জানালেন তিনি। অভয়বাণীতে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হলেন। আবার গোয়েন্দা কল। এবার সোজাসাপটা কথা আপনি পদ ছাড়ুন, এক নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হবেন সাবের হোসেন চৌধুরী। বিনিময়ে সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষ থেকে প্যারাডো গাড়ি পাবেন, প্রয়োজনে দুটো। তৃতীয় বার রায়ের বাজারস্থ বাসায় গেলো সশস্ত্র দল। মুকুল বোস বললেন দলের দুঃসময়ে আমি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিতে পারি না। স্যরি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়া সম্ভব নয়। এর আগে আমাকে দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন আমির হোসেন আমু মুকুল বোস।

যাহোক মুকুল বোস আমাকে সব বললে গুনীমান্য সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের দৈনিক আমাদের সময়। মুকুল বোসের বরাত দিয়ে রিপোর্ট করে পাঠালাম।

শিরোনামটি "আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদের দাম দুটি প্যারাডো গাড়ির দামের সমান? সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন সরকার "টু মাইনাস থিউরি" বাস্তবায়নে মরিয়া। সংস্কারপন্থীরা গিলেছেও অনেকটা। মুকুল বোস দলীয় সভানেত্রীর বিকল্প হতেই পারে, মর্মে বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন। আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় সংস্কারপন্থীরা তোপের মুখে পড়েন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে দৃশ্যপট ছিলো জেলা নেতাদের বর্ধিত সভায় তা পাল্টে যায়। মুকুল বোস লাঞ্ছিত হন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দেশে ফিরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। শুরু হয় নতুন মোড়কে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাদের-ছাত্রদের সংঘর্ষে, বৈদেশিক চাপ সরকারকে নতিস্বীকার করে মুক্তি দিতে হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিএনপি নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসন পায়। মুকুল বোসের সঙ্গে আচরণের প্রতিক্রিয়া নিশ্চয়ই সাবের হোসেন চৌধুরীর কথিত সাদামনটাকে কালিমালিপ্ত করে দিয়েছে। ওয়ান ইলেভেনে বিতর্কিত ভুমিকার কারণে সংসদ সদস্য হিসাবে শপথগ্রহণের আগেই সাবের চৌধুরী হারান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিবের পদ। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে কেড়ে নেয়া সাংগঠনিক সম্পাদকের পদটিও। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালিকায় সাবের চৌধুরীর স্থলে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোজাফফর হোসেন পল্টুর নামছিলো। মনোনয়ন ঘোষণার এক ঘন্টা আগে প্রভাবশালী একটি দেশের কুটনৈতিক দৃতাবাসের প্রতি সমীহ দেখিয়ে সাবের চৌধুরীর মনোনয়ন দিতে হয়। মুকুল বোস বঙ্গবন্ধু হত্যাত্তোর নির্যাতিত নিপীড়িত নেতা ছিলেন নবীনদের কাছে প্রিয় দাদা। সংস্কারপন্থীদের দলে ভিড়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পরমস্নেহে আঘাত করেন। নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। তারপরও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সৈনিক। আওয়ামী লীগে গত কাউন্সিলে মুকুল বোসকে করে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়ে মুকুল বোস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অর্থবৈভবের পেছনে ছুটতে দেখা যায়নি তাকে। চিকিৎসা খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। যাদের সংস্কারে গা ভাসিয়ে ছিলেন সেই আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও প্রেসিডিয়াম এমনকি ওয়ার্কিং কমিটিরও বাইরে। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, কারামুক্ত ওবায়দুল কাদেরের (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) উপস্থিতেই দলের কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের আসন অলংকৃত করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মুকুল বোস যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়ে দুঃখবরণ করেন। ৭জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরী,আব্দুল মান্নান (প্রয়াত) মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আব্দুর রহমান বীর বাহাদুর সবাইকেই তো সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ হারাতে হয়। সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে না থাকা সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান, আব্দুর রহমান এমপি বীর বাহাদুর এমপিকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য করে রাখা হয়। আব্দুর রহমান অবশ্য পরবর্তী কাউন্সিলেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সর্বশেষ কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। 

উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হয়ে মুকুল বোস আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছিলেন। আসা শুরু করেছিলেন ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। সামরিক বিরোধী আন্দোলন জেল-জুলুম মুকুল বোসকে গরম জলে গোসল করতে শিখিয়েছে। ২০০১- থেকে ওয়ান ইলেভেন, আন্দোলনে অবিস্মনীয় ভুমিকা তার। ২১আগস্ট গ্রেনেড মুকুল বোসেরও রক্ত ঝরিয়েছে। মুকুলেরা রক্তের আখরে লিখে যায় বঙ্গবন্ধুর নাম।

 লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ইতিহাস গবেষক