NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
সেই কনস্টেবল পেলেন পিপিএম পদক, দেখা করলেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজারবাইজানকে বিনিয়োগের পাশাপাশি মানবসম্পদ কাজে লাগানোর আহ্বান ‘তারা এখন আমাকে সম্মান করেন’—বেজোস ও জাকারবার্গ সম্পর্কে ট্রাম্প বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক ‘কিং’ শাহরুখের রানি দীপিকা, জমবে কি পুরনো ম্যাজিক মানুষ ভালো সমাধান মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকারকেই-ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমরা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি : শিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের ১৬ ইউটিউব চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ, বিবিসিকেও সতর্কতা কানাডার নির্বাচনে ফের জয় পেয়েছে লিবারেল পার্টি ইরেশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বাঁধনসহ তারকাদের প্রতিবাদ
Logo
logo

ইন্টারনেটের স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ হচ্ছে, ক্ষুব্ধ অপারেটররা


খবর   প্রকাশিত:  ১৭ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:৫৮ এএম

ইন্টারনেটের স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ হচ্ছে, ক্ষুব্ধ অপারেটররা

ঢাকা: বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৭০ শতাংশ মোবাইল ফোন গ্রাহকের পছন্দের তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ। গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরদের জানিয়ে দেয়, আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে এই প্যাকেজ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজও। আর মোট প্যাকেজের সংখ্যা ৯৫ থেকে কমিয়ে ৪০-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা এবং কী কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা জানাতে আজ রবিবার বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সভায় সাংবাদিকসহ টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

মোবাইল ফোন অপারেটরদের হিসাব অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ৬৯.২৩ শতাংশ ব্যবহার করে তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ। বাকিদের মধ্যে ১৬.৮৪ শতাংশ ব্যবহার করে সাত দিনের ও ১০.১১ শতাংশ ব্যবহার করে ৩০ দিনের প্যাকেজ।

মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের ইন্টারনেট ডাটা বিক্রির প্রায় ৫০ শতাংশই তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজের গ্রাহক।

 

এই প্যাকেজের আওতায় এক জিবি থেকে শুরু করে ১০ জিবি পর্যন্ত ডাটা ব্যবহার করা যায় এবং এগুলোর দাম ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ প্যাকেজের গ্রাহকরা সাধারণত মোট ডাটার প্রায় ৯০ শতাংশই মেয়াদের মধ্যেই ব্যবহার করে থাকে। বিটিআরসি পরিচালিত গ্রাহকদের মতামতের জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৪১.০৩ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট প্যাকেজ পরিবর্তনের নতুন এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে মতামত দিয়েছে।

মোবাইল ফোন অপারেটররা যা বলছে

মোবাইল ফোন অপারেটরদের পক্ষে বলা হচ্ছে, জনপ্রিয় তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী এবং নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

নিম্ন আয়ের অনেক গ্রাহক প্রবাসে থাকা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্বল্পমেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে। আবার অনেকে স্থায়ীভাবে কর্মক্ষেত্রে ও বাসায় ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প মেয়াদের মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে। এরাও সমস্যায় পড়বে। নতুন এই সিদ্ধান্তে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি হয়তো বিবেচনা করতে পারে যে এ ধরনের গ্রাহকরা প্যাকেজের সব ডাটা ব্যবহার করতে পারছে না, অথবা অতিরিক্ত ডাটা এক শ্রেণির গ্রাহক পর্নোগ্রাফি দেখাসহ নানাভাবে অপব্যবহার করছে।

কিন্তু তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজ বন্ধ করে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। কারণ তারা সাত দিনের প্যাকেজ কিনেও একই কনটেন্ট দেখতে পারবে। এ ছাড়া গ্রাহকদের বেছে নেওয়ার জন্য নানা ধরনের প্যাকেজ থাকা দরকার।

 

মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে অপারেটরভেদে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মোবাইল ফোন গ্রাহক তিন দিন বা তারও কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে। এ অবস্থায় প্যাকেজের সংখ্যা ৪০-এ বেঁধে দেওয়া হলে, তা প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের পছন্দ অনুসারে প্যাকেজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করবে। আমরা মনে করি, গ্রাহকের নিজস্ব চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজসংখ্যা নির্ধারণে কোনো সময়সীমা থাকা উচিত নয়।’

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করা হলে বহুসংখ্যক গ্রাহকের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাংলালিংকের ৪৮ শতাংশের বেশি গ্রাহক তিন দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করে। এটি বন্ধ হলে গ্রাহকদের বেশি মূল্যের অন্যান্য প্যাকেজ কিনতে হবে। তারা তখন বেশি খরচ করে সাত দিন বা ৩০ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করবে অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে। এই সিদ্ধান্ত সার্বিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রসার কমিয়ে দেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘মোবাইলের প্যাকেজ ডিজাইন করা হয় বিভিন্ন স্তরের গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে। কারণ একজন শিক্ষার্থী অথবা একজন নিম্ন আয়ের মানুষের মোবাইল ব্যবহারের প্যাটার্ন আর একজন ব্যবসায়ীর মোবাইল ব্যবহার এক নয়। দেশের নিম্ন আয়ের যে ৪৫ শতাংশ মানুষ এখনো মোবাইলের আওতায় আসেনি, তাদের এই সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই আমরা। এ জন্য তাদের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ দরকার।

এ ছাড়া প্যাকেজসংক্রান্ত সর্বশেষ নির্দেশনাটি মাত্র বছরখানেক আগে দেওয়া হয়েছে। মার্কেটে এর ব্যাবহারিক প্রভাব কী, তা এখনো পুরোপুরিভাবে পরীক্ষিত নয়। এখন আবার প্যাকেজ সংখ্যা ও এর সময় নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এই পরিবর্তনের প্রভাব পুরো খাতে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণেও পড়তে পারে।’

গ্রাহকদের পক্ষে প্রতিক্রিয়া

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিটিআরসির এই সিদ্ধান্ত গণবিরোধী। প্যাকেজ কমানোর নামে স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ করা হলে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে। গ্রাহকরা তখন বেশি দামে বেশি মেয়াদের প্যাকেজ নিতে বাধ্য হবে। এটি তাদের ব্যয় বাড়াবে। আমরা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত বুধবার গ্রাহকদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টাকেও বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের মতামত জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

বিটিআরসি বলছে বন্ধ নয়, প্রতিস্থাপন

কেন তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ করা হচ্ছে—এ প্রশ্নে গতকাল শনিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেছেন, আজ রবিবারের সভায়ই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর মোবাইল অপারেটরদের কাছে যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে, তাতে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, এ প্রশ্নেও একই জবাব মিলেছে।

তবে বিটিআরসির কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, বিটিআরসি গ্রাহকের স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজে যে পরিমাণ ডাটা থাকে, তা অনেকে ওই সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে পারে না। এ কারণে এটি সাত দিনের প্যাকেজে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা একই মূল্যে বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযগে পাবে। এ ছাড়া ১৫ দিন মেয়াদের প্যাকেজটিও ৩০ দিন মেয়াদে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, রবিবারের সভায়ই এর অবসান হবে।