দেশ ভাগ হয়ে যেতে পারে বলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যে হুমকি দিয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে নওয়াজ বলেন, সীমা অতিক্রম করার সাহস দেখাবেন না।

এর আগে, বুধবার দেশটির সংবাদমাধ্যম বোল টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে, তাহলে পাকিস্তান তিন খণ্ডে বিভক্ত হবে।

এই হুমকির জবাবে তুরস্ক সফররত শেহবাজ শরিফ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে লাগাম টেনে ধরে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারি যেকোনও অফিসের জন্য খান অযোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেহবাজ শরিফ বলেন, রাজনীতি করুন। কিন্তু সীমা অতিক্রম করে পাকিস্তান ভাগের কথা বলার সাহস দেখাবেন না।

বোল টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেছিলেন, সরকার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আমি আপনাকে লিখিতভাবে আশ্বস্ত করতে পারি যে, সরকার এবং সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ দেউলিয়া হয়ে গেলে দেশের কী হবে?

‘পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যদি সেটা ঘটে, তাহলে কোন প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? সামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আমাদের ক্ষতি হবে কোনটা? পরমাণু অস্ত্রের মর্যাদা।’

ইমরান খান বলেন, এই মুহূর্তে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে দেশটি আত্মহত্যার দিকে অগ্রসর হবে। পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানগুলো বেলুচিস্তানকে ভাগ করার পরিকল্পনা করছে। যে কারণে আমি সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছি।

সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ ও বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্ধেকেরও বেশি সময় সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহণের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ ছিল বলে মনে করা হয়।

দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত সেনাবাহিনীর পরোক্ষ মদতেই পাকিস্তানের বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজকে (পিএমএল-এন) হটিয়ে ক্ষমতায় বসার সুযোগ পান তিনি।

কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় ইমরান খানের। দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নতুন প্রধান নাভিদ আনজুমকে আনুষ্ঠানিক নিয়োগদানকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় এই দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে বিরোধীদলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে।

পরে যদিও নতি স্বীকার করে নাভিদ আনজুমের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন ইমরান খান, কিন্তু ততদিনে পরিস্থিতি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে, পার্লামেন্টে নিজেদের প্রস্তাবে অনড় বিরোধীরাও আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যায়। আদালত ও পার্লামেন্টে বিস্তর নাটকীয়তার পর ১০ এপ্রিল বিরোধীদের অনাস্থাভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হারান ইমরান খান, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন শেহবাজ শরিফ।