ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে এবং আরও বিদেশি সহায়তার আশায় চীন, ভারত এবং জাপানকে নিয়ে দাতা সম্মেলন আয়োজন করছে শ্রীলঙ্কা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান বেলআউটের আলোচনার মাঝেই এই সম্মেলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন। 

গত সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশ। বিদেশী মু্দ্রার মজুত না থাকায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মত অতি-জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ভারত মহাসাগরের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র।

ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েকমাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। এছাড়া পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস কিনতে লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি দেশটির জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করেছে। যে কারণে রনিল বিক্রমাসিংহে নেতৃত্বাধীন সরকারকে আইএমএফ এবং বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো থেকে সহায়তা পাওয়ার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হচ্ছে।

সংসদে দেওয়া ভাষণে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আমাদের ভারত, জাপান এবং চীনের সহায়তা দরকার; যাদের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক মিত্রতা রয়েছে। শ্রীলঙ্কা সংকটের সমাধান খুঁজতে আমরা এসব দেশকে নিয়ে দাতা সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও সহায়তা চাইবো। বিক্রমাসিংহে বলেছেন, নয়াদিল্লির অতিরিক্ত সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার ভারতের উচ্চ-পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল কলম্বো পৌঁছাবে। এছাড়া আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের একটি দল শ্রীলঙ্কা সফর করবে।

ভারত এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অন্যান্য সহায়তা রয়েছে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার ঘিরে ঐতিহ্যগতভাবে নয়াদিল্লি এবং বেইজিংয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। শ্রীলঙ্কার জরুরি আমদানির ব্যয় মেটানোর জন্য দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় কলম্বোর একটি আবেদন বিবেচনা করছে চীন।

 

চলতি সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে পৌঁছানো আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে বৈশ্বিক ঋণদাতা এই সংস্থার সাথে শ্রীলঙ্কার একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা রাজস্ব নীতি, ঋণ কাঠামো সংশোধন এবং প্রত্যক্ষ নগদ অর্থায়নসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’

‘একই সঙ্গে আমরা একটি ঋণ কাঠামো পুনর্গঠন করা নিয়েও আলোচনা শুরু করেছি; আশা করছি জুলাই মাসের শেষের দিকে এটি সম্পন্ন হবে।’

গত এপ্রিলে বৈশ্বিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ স্থগিত ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। সেই সময় ঋণ পরিশোধে নিজেদের অক্ষমতা ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি আইএমএফের কাছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার চায় দেশটি।

বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলে তার সরকার শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করার ওপর নজর দেবে। একেবারে অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়া একটি দেশকে ঘুরে দাঁড় করানো সহজ কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 
সরকারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় দেশের বিরোধী দলগুলোর সমর্থন চেয়েছেন লঙ্কান এই প্রধানমন্ত্রী।