দীর্ঘ ২০ বছর জেলে থাকার পর মুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর এনা মন্তেস। কিউবার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরগিরির অভিযোগে ২০০১ সালে এনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৬৫ বছর বয়সী এনা মন্তেস যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের হয়ে কাজ করলেও কিউবার গোয়েন্দাদের কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন।
২০০১ সালে তাকে আটক করার পর মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এনা কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা কার্যক্রমের তথ্য ফাঁস করে দেন। অপর এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আটক গুপ্তচরদের মধ্যে এনা ছিলেন ‘সবচেয়ে ক্ষতিকর।’
মার্কিন এ নারী গুপ্তচর কিউবার হয়ে গুপ্তচরগিরি শুরু করেন ১৯৮৪ সালের পর। তিনি মূলত তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যান এবং তার প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষুদ্ধ ছিলেন। ওই সময় রোনাল্ড রেগ্যান লাতিন আমেরিকায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলেন। বিশেষ করে নিকারুগুয়ার সশস্ত্র দল নিকারুগুয়া কন্ট্রাসকে রেগ্যান সহায়তা করছিলেন। যা গুপ্তচর এনাকে রাগান্বিত করে তোলে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এনার মার্কিন বিরোধী মনোভাব জানতে পেরে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তার এক সহপাঠী তার সঙ্গে দেখা করেন। ওই সহপাঠী তাকে নিউইয়র্কে কিউবার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। প্রথম বৈঠকে তিনি সম্মত হন ‘কিউবার মাধ্যমে নিকারুগুয়াকে সহায়তা করবেন।’
এর পরের বছর হাভানায় প্রশিক্ষণ শেষে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন এনা। তার কাজ ছিল কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা। এতে করে বিভিন্ন গোপন খবর তার কাছে আসত।
সেগুলো কিউবার কাছে পৌঁছে দিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতি সপ্তাহে অপর এক গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। এছাড়া প্যাগার ব্যবহার করে গোপন কোডের মাধ্যমে তথ্য পাচার করতেন। অন্যদিকে কিউবার কর্মকর্তারা রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ এ কাজ করেছেন তিনি।
তবে ২০০১ সালে অন্য মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পারেন, তাদেরই একজন কর্মকর্তা কিউবা বিষয়ক তথ্য ফাঁস করছেন। এরপর তদন্ত করে এনার খোঁজ পেয়ে তাকে আটক করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এনাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে ২০ বছর সাজা ভোগের পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে।
এনা মন্তেস জেল থেকে মুক্ত হলেও তিনি আগামী পাঁচ বছর নজরদারিতে থাকবেন। যার মধ্যে থাকবে তার ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টিও। মূলত তিনি যেন আবার কোনো গোয়েন্দা কার্যক্রম না চালাতে পারেন সেটি নিশ্চিতে তার ওপর নজরদারি চালানো হবে। তবে যারা এনাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন তারা জানিয়েছেন, এনার বয়স এখন শেষ। নতুন করে আবারও গোয়েন্দাগিরি করে নিজের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবেন না তিনি।