আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: মজুরি বৃদ্ধি ও তেলে ভর্তুকি বাড়ানোর দাবিতে সাতদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রাক চালকদের ধর্মঘট চলছে। এতে পণ্য পরিবহণ মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গাড়ি নির্মাতা হুন্দাই থেকে শুরু করে পোস্কোর মতো বৃহৎ স্টিল উৎপাদনকারী কোম্পানি, লরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন সবাই।
বিবিসি জানায়, লরি চালকরা বেতন আরও বাড়ানোর দাবির পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই খাতে সরকারি ভর্তুকি আরও বাড়ানোর দাবিতে এ ধর্মঘট করছেন। ধর্মঘটের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর জুন মাসে দেশটিতে রপ্তানি প্রায় ১৩ শতাংশ কমে গেছে। ধর্মঘট আরও দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া গাড়ি থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রিক পণ্য এবং কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের বৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ।
হুন্দাই দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ। সোমবার (১৩ জুন) হুন্দাইয়ের মুখপাত্র বিবিসি-কে বলেন, ধর্মঘটের ফলে দক্ষিণ-পূর্বের শহর উলসানে তাদের বৃহত্তম উৎপাদন কেন্দ্রে ‘আংশিকভাবে উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে’। তিনি বলেন, হুন্দাই মোটর নিবীড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা আশা করছি দ্রুত উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে আসবে যাতে আমাদের ক্রেতাদের উপর এর প্রভাব সামান্যই হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ স্টিল উৎপাদনকারী কোম্পানি পোস্কো জানায়, ধর্মঘটের কারণে তারা পণ্য পরিবহণ করতে পারছে না। ফলে তাদের গুদামে তৈরি পণ্য রাখার আর জায়গা নেই। তাই উৎপাদন কমাতে তারা বাধ্য হয়েছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেন, কবে নাগাদ এই ধর্মঘট শেষ হয়ে আমরা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।
কম্পিউটারের মেমোরি চিপ উৎপাদনকারী কোম্পানি এসকে হাইনিক্স এবং ইলেক্ট্রোনিক জায়ান্ট স্যামসাং ধর্মঘটের কারণে তাদের পণ্য উৎপাদনে কী প্রভাব পড়ছে সে বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হয়নি।
৭ জুন (মঙ্গলবার) থেকে ধর্মঘট শুরু করেন দক্ষিণ কোরিয়ার লরি ও ট্রাক চালকরা। সরকার বা ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় চার লাখ ২০ হাজার লরিচালক রয়েছেন। তারা বেশিরভাগই স্বাধীন শ্রমিক।
তারা মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য পরিবহণের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি চাইছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় লারিতে পণ্য পরিবহণের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার নিয়ম চালু করা হয়েছিল। আসছে ডিসেম্বরে যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
ভূমি, আবকাঠামো এবং পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শনিবারও আট ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকে কোনো অগ্রগতি হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।