নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্টরাও। এ ছাড়া ট্যাক্সি ড্রাইভার ও এর যাত্রীরা রয়েছেন অপরাধীদের টার্গেটে। মহামারি করোনা কিছুটা কমে আসার পর পরই নিউইয়র্কের সাবওয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকে। অনিরাপদ হয়ে ওঠে সিটি। মানুষের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। পরবর্তী সময়ে কিছুটা কমে এলেও মানুষের ভয় এখনো কাটেনি। সন্ধ্যা বা রাতে মানুষ হাঁটাচলা করতে ভয় পান। রাতের বেলায় সাবওয়েতে নিজেদের নিরাপদ মনে করনে না। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠায়, যাতে তারা একা একা না চলেন। বিশেষ করে, রাতের বেলায়। তাদের দলবদ্ধভাবে চলাফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়। গেল কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত ১৮ আগস্ট বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটে পার্কিং করা একটি গাড়ি থেকে ১০ হাজার ডলার মূল্যের স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়েছে ডাকাতেরা। নিতু তালুকদার নামের এক প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জ্যাকসন হাইটসের একটি দোকান থেকে ওই গহনা কেনেন। ওই গয়না দেশে নিয়ে একটি বিয়েতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন তারা। তাদের ধারণা, আগে থেকেই ডাকাতেরা তাদের অনুসরণ করছিল। কারণ গাড়ি পার্ক করার কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই ডাকাত দলের সদস্যরা গাড়ি থেকে গহনা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। দিনেদুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় জ্যাকসন হাইটসবাসী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন, প্রশাসন চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাই-লুটের মতো ঘটনা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। এর আগে জেবিবিএর পক্ষ থেকে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করা হয়েছিল। জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশি ট্রাফিক পুলিশ মোহম্মদ ফারুক হোসেনকে লক্ষ্য করে ম্যানহাটনের লেক্সিনটন অ্যাভিনিউ, ১১২ স্ট্রিটে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্ত। সতর্ক হওয়ায় ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় একটি গুলিও তার শরীরে আঘাত করেনি। প্রথম গুলির শব্দ পেয়েই তিনি রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এরপর তিনি পুলিশের গাড়ির কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্ত। সেখানকার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং ওই দুর্বৃত্তকে আটক করে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। কী কারণে তার ওপর হামলা হলো, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ফারুক হোসেনের ঘটনার পর ট্রাফিক ইউনিয়ন-সিডব্লিউ লোকাল-১১৮২ এর পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দিয়ে কর্তব্যরত সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিউইয়র্ক পুলিশে ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্টের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি আমেরিকান সেখানে কাজ করছেন ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে কুইন্সের একজন ট্যাক্সিচালককে গত ২০ আগস্ট শনিবার যাত্রীবেশে কয়েকজন মারধর করে হত্যা করে। ওইদিন সকালে তাকে কুইন্সের রকওয়ে বিচের ৫৪ স্ট্রিটে নিয়ে যায় তারা। সেখানে পৌঁছে যাত্রীদের কাছে ভাড়া চাইলে তারা ভাড়া না দিয়ে তাকে মারধর করেন। তাকে পুলিশ উদ্ধার করে কুইন্সের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম কুটিন গাইমাহ। তিনি তার চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ব্রঙ্কসে থাকতেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে তার হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ড্রাইভার্স ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স। ইতিমধ্যে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গত জুন মাসেও ম্যানহাটনের থার্ড অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক আলীকে মারধর করে জখম করে দুর্বৃত্তরা। একাধিক ট্যাক্সিচালক বলেছেন, তারা মানুষকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় গন্তব্যে পৌঁছে দেন। তারা যদি এ ধরনের হামলার শিকার হন, তাহলে নিরাপদে মানুষের চলাচল ব্যাহত হবে। কারণ নিউইয়র্কে পর্যটক এবং অনেক মানুষ ট্যাক্সিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। দুর্বৃত্তরা এভাবে হামলা করতে থাকলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়বে। ট্যাক্সিচালকেরাও ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে চাইবেন না। এ ব্যাপারে কমিউনিটি লিডার মাজেদা উদ্দিন বলেন, নিউইয়র্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। আমাদের কমিউনিটির মানুষও অপরাধের শিকার হচ্ছে। এখানে মানুষের জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এর আগে ম্যানহাটনে একজন হেট ক্রাইমের শিকার হলেন, কলেজছাত্রীর লাশ পাওয়া গেল, জিতুকে হত্যা করা হলো, সাবওয়েতে একজনকে আক্রমণ করা হলো, বিভিন্ন সময়ে ট্যাক্সিচালকদের ওপর হামলা হচ্ছে-সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপ। এসব ঘটনায় সব অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ অবস্থায় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, পুলিশি টহল বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।