সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর ‘বেশির ভাগ অংশ’ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর)। অন্যদিকে স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া আলেপ্পোর বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে
সংস্থাটি আরো জানায়, বুধবার শুরু হওয়া আক্রমণে ২০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিকসহ ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। এই আক্রমণটি সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীর দ্বারা আলেপ্পো থেকে উৎখাতের পর এই প্রথম শহরে তাদের প্রবেশ।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী শনিবার নিশ্চিত করেছে, বিদ্রোহীরা শহরের ‘বড় অংশে’ প্রবেশ করেছে এবং লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতির জন্য’ সেনারা অস্থায়ীভাবে আলেপ্পো থেকে সরে গেছে। এ ছাড়া রয়টার্সকে সামরিক সূত্র জানিয়েছে, আলেপ্পোর বিমানবন্দর ও শহরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এসওএইচআর শনিবার শুরুতে জানায়, বিদ্রোহীরা শহরের ‘বেশির ভাগ অংশ’ দখল করতে সক্ষম হয়েছে এবং এই সময়ে বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি তারা।
এর আগে শুক্রবার সরকারি বাহিনী জানায়, আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের বেশ কিছু শহরে তারা অবস্থান পুনর্দখল করেছে, যা বুধবার সশস্ত্র গোষ্ঠী এইচটিএস ও মিত্রদের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে সরকারের দমন-পীড়নের পর সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত সশস্ত্র গ্রুপগুলো এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বিস্তৃত এলাকা দখল করে, যাদের মধ্যে জিহাদিরাও রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সিরিয়া ও রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ইদলিবের কাছে ২৩টি বিমান হামলা চালায় বলে এসওএইচআর জানিয়েছে। রুশ হামলায় চারজন বেসামরিক নিহত ও ১৯ জন আহত হয়েছে। রুশ সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘উগ্রবাদী বাহিনী’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘সিরিয়ার সরকারকে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা সহায়তা করছি।’
শুক্রবার বিদ্রোহীদের একটি চ্যানেলে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের বাহিনী আলেপ্পো শহরে প্রবেশ শুরু করেছে।’ যাচাইকৃত ভিডিওতে সশস্ত্র লোকদের আলেপ্পোর কেন্দ্রীয় সিটাডেল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে একটি রাস্তায় দৌড়াতে দেখা গেছে। আরেকটি ভিডিওতে বড় বড় দলে মানুষকে ব্যাগ নিয়ে আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সরে যেতে দেখা গেছে। ভিডিওটি এমন একটি জায়গার তিন কিলোমিটার দূর থেকে রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে বিদ্রোহী বাহিনী শহরে প্রবেশ করেছে বলে এইচটিএস অধিভুক্ত মিডিয়া দাবি করেছে।
আলেপ্পোর ৫১ বছর বয়সী বাসিন্দা সরমাদ এএফপিকে বলেন, ‘দিন-রাত গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমরা ভীত, যুদ্ধ শুরু হলে আবারও ঘরছাড়া হতে হবে।’
জাতিসংঘের সিরিয়ার আঞ্চলিক মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী ডেভিড কারডেন বলেন, ‘শেষ তিন দিনে লাগাতার হামলায় অন্তত ২৭ জন বেসামরিক নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে আট বছরের কম বয়সী শিশুও রয়েছে।’
২০২০ সালে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইদলিবে সংঘর্ষ কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু বুধবার এইচটিএস ও তাদের মিত্ররা ‘আক্রমণ প্রতিরোধে’ অভিযান শুরু করেছে বলে জানায় এবং সরকারপন্থী মিলিশিয়াদের অভিযানের অভিযোগ তোলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির একটি কারণ হলো সিরিয়ার মিত্র ইরান ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের হামলার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সূত্র : বিবিসি