ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কলকাতায় ১৫০ বছরের পুরনো ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু শহরের ময়দান থেকে এসপ্লানেড এলাকা পর্যন্ত একটি ঐতিহ্যবাহী রুটে এটি চলবে। রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী সোমবার এই কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রামপ্রেমীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন।
কলকাতা ভারতের একমাত্র শহর, যেখানে এখনো ট্রাম চলে। চক্রবর্তী বলেছেন, ধীরগতির ট্রাম, যা রাস্তায় যানজট তৈরি করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে চালানো সম্ভব নয়। কারণ যাত্রীদের দ্রুতগতির পরিবহন দরকার।
চক্রবর্তী সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, ‘ট্রামগুলো নিঃসন্দেহে কলকাতার ঐতিহ্যের অংশ, যা ১৮৭৩ সালে ঘোড়ার গাড়ি হিসেবে চালু হয়েছিল এবং আগের শতাব্দীতে পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ট্রামের বিষয়ে বিষয়টি বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন এবং পরবর্তী শুনানিতে রাজ্য সরকার এই বিষয়ে বক্তব্য জানাবে।
মন্ত্রী আরো জানান, মেট্রোপলিটন শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম রাস্তার জায়গা থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশ পিক আওয়ারের সময়ও ট্রাফিক প্রবাহ বজায় রেখেছে। ‘যাতে মানুষ যানজটের কারণে অফিসে দেরি না করে। আমরা কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছি, যার মধ্যে ট্রাম বন্ধ করার সিদ্ধান্তও রয়েছে।’
এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি রুটে ট্রাম পরিষেবা ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে।
একটি প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার শুধু সেসব বাণিজ্যিক যানবাহনগুলোকেই রাস্তা ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। যা দূষণ নিয়মাবলি মেনে চলে এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত করে, ‘যা ইতিমধ্যেই ফল দিচ্ছে’।
অন্যদিকে রাজ্যের ঘোষণার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, তারা শহরের পাঁচটি ট্রাম ডিপোর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে। পরিবেশকর্মী ও ট্রামপ্রেমী সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ পিটিআইকে জানান, ‘আমরা এটা ঘটতে দেব না। যদি রাজ্য সরকার সত্যিই যানজট কমানোর বিষয়ে সিরিয়াস হয়, তাহলে তারা দখল সরাতে এবং রাস্তা প্রশস্ত করতে পারে। ট্রাম, যা দূষণমূক্ত, ধীরগতি নয়। কারণ তাদের গড় গতি ঘণ্টায় ২০-৩০ কিলোমিটার, যা শহরের গাড়িগুলোর গড় গতির সমান।’
অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য কৌশিক দাস বলেন, ‘যদি সরকার ট্রামকারগুলোর মেরামত করে এবং কয়েক বছর ধরে অপ্রচলিত থাকা ট্রামগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে, তাহলে তারা ট্রামগুলোর বহরকে মসৃণভাবে চালাতে পারবে।’
অ্যাসোসিয়েশন কলকাতার ট্রাম বাঁচাতে একটি হ্যাশট্যাগ প্রচারণাও চালু করেছে। কৌশিক বলেন, ‘আমরা এই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম বাঁচানোর আন্দোলন শুরু করব।’