লেবাননে পেজার (যোগাযোগের তারহীন যন্ত্র) বিস্ফোরণের পর ফের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হিজবুল্লাহর ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগের নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের কারণে এবার অন্তত ২০ জন নিহত ও ৪৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। যেসব স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলোকে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে দেখা হয়।
এর আগের দিন গত মঙ্গলবার হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজারে একযোগে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত ও তিন হাজার মানুষ আহত হয়। ওই বিস্ফোরণে নিহত কয়েকজনের জানাজার সময়ও সেখানে কিছু বিস্ফোরণ ঘটেছে। মঙ্গলবারের ওই হামলার জন্য হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দায়ী করলেও এখন পর্যন্ত লেবাননের বিস্ফোরণ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
গাজায় ইসরায়েলের ১১ মাস পুরনো যুদ্ধ চলছেই, পাশাপাশি এ ঘটনা লেবানিজ সীমান্তে সংঘর্ষ বৃদ্ধির আশঙ্কা এবং আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধে একটি নতুন পর্ব শুরু করছি। এর জন্য আমাদের সাহস, সংকল্প এবং অধ্যবসায় প্রয়োজন।’ জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা (ইসরায়েল) বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্যকে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এ ঘটনার জন্য দায়ী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা বলছে, সংঘাত এড়াতে নিবিড় কূটনীতি অনুসরণ করছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইসরায়েল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনকে এই বিস্ফোরণের বিষয়ে বলেছিল। ইসরায়েল বলেছিল, ‘লেবাননে কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
লেবাননে বুধবারের বিস্ফোরণটি ঘটেছিল ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ কর্তৃক আয়োজিত একটি জানাজার অনুষ্ঠানে। তখন গোষ্ঠীটির হাজার হাজার পেজার দেশজুড়ে বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং এর অনেক যোদ্ধা আহত হয়েছিল।
বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে রয়টার্সের একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তিনি দেখেছেন হিজবুল্লাহ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে ওয়াকিটকি থেকে ব্যাটারি বের করে ফেলছে, যদিও সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। মোবাইল ফোনে ইসরায়েলি নজরদারি এড়াতে হিজবুল্লাহ পেজার এবং অন্যান্য নিম্ন-প্রযুক্তি যোগাযোগ ডিভাইসের দিকে ঝুঁকছে।
এদিকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গতকাল তারা রকেট দিয়ে ইসরায়েলি আর্টিলারি অবস্থানগুলোতে আক্রমণ চালিয়েছে। বিস্ফোরণের পর এটি চিরশত্রুর বিরুদ্ধে প্রথম হামলা। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
লেবাননের রেড ক্রস এক্স-এ বলেছে, লেবাননের দক্ষিণ এবং বেকা উপত্যকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের পর তাদের ৩০টি অ্যাম্বুল্যান্স দল উদ্ধারের জন্য ছুটে যায়।
বিস্ফোরিত ওয়াকিটকির ছবিতে জাপানি রেডিও কমিউনিকেশনস এবং টেলিফোন কম্পানি আইসিও (৬২০৮.টি)-এর নামের লেবেলগুলো দেখা যায় এবং ফার্মের মডেল আইসি-ভি৮২ ডিভাইসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে ওসাকাভিত্তিক সংস্থাটি বলেছে, বিদেশি বাজারের জন্য পণ্যগুলো একচেটিয়াভাবে অনুমোদিত পরিবেশকদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। জাপানের নিরাপত্তা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুসারেই তা রপ্তানি করা হয়।
কম্পানিটি এর আগে বাজারে তার ডিভাইসের নকল, বিশেষ করে বন্ধ হওয়া মডেলগুলো সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ পাঁচ মাস আগে ওয়াকিটকিগুলো কিনেছিল, প্রায় একই সময়ে পেজারগুলোও কিনেছিল।