ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় নবান্ন অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। সচিবালয়কে সুরক্ষিত রাখতে কলকাতা ও হাওড়া থেকে নবান্নগামী সব রাস্তায় তিন স্তরের ব্যারিকেড লাগানো হয়েছিল। তার পেছনে ছিল প্রচুরসংখ্যক পুলিশ। দাঙ্গা পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল।
এত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও দুপুর ১টার পর থেকে কলকাতা ও হাওড়া থেকে নবান্নগামী রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হয়।
ইটের আঘাতে একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এদিন ডয়চে ভেলের চিত্রসাংবাদিক সুব্রত গোস্বামী ছিলেন কলেজ স্ট্রিট, মহাত্মা গান্ধী রোডসহ কলকাতার দিকে। আরেক চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ ছিলেন হাওড়া ব্রিজ ও আশপাশের এলাকায়।
এবিপি আনন্দ চ্যানেলে দেখা যায়, জলকামানের পানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর সেই জলকামান একটু সরিয়ে নিয়ে দমকলের ইঞ্জিন থেকে পানি ভরা হচ্ছে। তারপর আবার তা কাজে লাগানো হয়। সেই সঙ্গে পুলিশ সমানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। সেই শেল অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীরা তুলে আবার পুলিশের দিকে পাঠিয়ে দেয়। অনেক জায়গায় তারা ইট মারতে তাকে। ফলে এই জায়গাগুলো রণক্ষেত্রর চেহারা নেয়।
নবান্নের খুব কাছে বিক্ষোভকারীরা
হাওড়ার মন্দিরতলা থেকে শরৎ চ্যাটার্জি রোড ধরে নবান্নের খুব কাছে পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড থেকে ১০০ মিটার দূরে ছিল নবান্ন। পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের চলে যেতে বলে। তারা যায়নি। তখন পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে থাকে। পুলিশ ও দাঙ্গাবিরোধী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের কিছুটা পেছনে সরিয়ে দেয়।
কলকাতার পরিস্থিতি
কলকাতায় স্ট্র্যান্ড রোড, মহাত্মা গান্ধী রোড, প্রিন্সেপ ঘাট স্টেশনের কাছে, সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কাছে জাজেস ঘাটের কাছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সমানে লাঠি চালায়, সমানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়।
জাজেস ঘাটের কাছে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ হয়। পরে পুলিশ ব্যাপক লাঠি চালায়। গঙ্গার ধার থেকে বিক্ষোভকারীদের ধরে এনে লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়।
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সামনে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা সেখানে ছিল। তাদের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা যাওয়ার সময় ঢিল মারে, মুখ্যমন্ত্রীর প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এটা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
হাওড়ার চিত্র
হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া ময়দান, ফোরশোর রোডে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। পরে তারা আবার জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। অনেক জায়গায় তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়।
প্রচুর আটক
পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষোভকারীদের আটক করে নিয়ে যায়। ভ্যানে করে আটকদের থানায় নিয়ে যায় তারা।
আন্দোলনকারীরা বারবার বলতে থাকে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ লাঠি চালায়। অনেক জায়গায় মেয়েরা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের ওপর লাঠি চালিয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, পুলিশ প্রচুর বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। বিজেপি তাদের আইনি সহায়তা দেবে বলেও জানান তিনি।
বিজেপির বক্তব্য
সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, বুধবার ১২ ঘণ্টার পশ্চিমবঙ্গ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিজেপি। তিনি বলেন, ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট সফল করতে দ্বারে দ্বারে গিয়ে তারা সবাইকে অনুরোধ জানাবেন।
এর আগে বুধবার থেকে বিজেপি অনির্দিষ্টকালের অবস্থান করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি। বুধবার আদালতে মামলা আছে। আদালতের অনুমতি পেলে বৃহস্পতিবার থেকে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার৷
তৃণমূলের বক্তব্য
তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেছেন, ‘এটা কিসের অরাজনৈতিক আন্দোলন? উদ্যোক্তারা নিজেরা স্বীকার করে নিয়েছেন তারা আরএসএস। তার পরও কারা এটাকে অরাজনৈতিক আন্দোলন বলছেন।’