রাশিয়া একটি ‘বর্বর’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব এবং ওয়াশিংটনকে এর ‘পরিণাম’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে । ক্রিমিয়ার একটি সৈকতে রবিবার ওই হামলা হয়। এতে শিশুসহ কমপক্ষে চারজন নিহত এবং ১৫১ জন আহত হয়েছে।

মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার জানায়, তারা রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসিকে তলব করে সেভাস্তোপল শহরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে মস্কো ক্রমাগতভাবে দাবি করেছে, তারা পশ্চিমাবিশ্বের সঙ্গে কার্যকরভাবে একটি প্রক্সি যুদ্ধ লড়ছে।

 

এদিকে সম্প্রতি ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। ক্রেমলিন বলেছে, সাম্প্রতিক এই মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে এবং ‘পরিণাম’ ভোগ করতে হবে।
 

এর আগে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রবিবার জানায়, মস্কো অধিকৃত ক্রিমীয় উপদ্বীপে মার্কিন সরবরাহকৃত পাঁচটি আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেমের (এটিএসিএমএস) ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের হামলা পরিচালিত হয়েছে।

 

তারা আরো জানায়, চারটি ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে এবং পঞ্চমটি আকাশে বিস্ফোরিত হয়েছে। তাদের দাবি, মার্কিন বিশেষজ্ঞদের দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর উপগ্রহের তথ্যের ভিত্তিতে হামলাস্থল নির্ধারিত হয়েছে। এ বিষয়ে এই বছরের শুরুতে ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ওয়াশিংটনের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের অবশ্যই প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

অবশ্যই প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা থাকবে।’

 

এ ছাড়া ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই হামলাকে ‘একদম বর্বর’ বলে অভিহিত করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জড়িত থাকার বিষয়ে মস্কো প্রতিক্রিয়া জানাবে।

তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘আপনাদের উচিত ইউরোপে ও সর্বোপরি ওয়াশিংটনে আমার সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করা...কেন তাদের সরকার রুশ শিশুদের হত্যা করছে।’

‘পরিণাম’
এ ছাড়া পেসকভ পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে সম্ভাব্য হামলার জন্য অন্য দেশকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেছেন এদিন। গত সপ্তাহে পুতিন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি সামরিক জোট চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন, যা পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

   

রাশিয়ার কর্মকর্তারা সম্প্রতি সতর্ক করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করছে। সেই সঙ্গে পুতিন বারবার বিশ্বের পারমাণবিক শক্তির সঙ্গে জড়িত আরো বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু ক্রিমিয়ার ওপর এই মারাত্মক হামলার জন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা একটি নতুন ধাপ। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করেছিল। মস্কো এখন অঞ্চলটিকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এটিকে ইউক্রেনের অংশ বলে মনে করে।

পেসকভ হামলার বিষয়ে আরো বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি এর পেছনে কারা রয়েছে।’ তার মতে, এটি স্পষ্ট যে কে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, কে রাশিয়ায় হামলা করেছে এবং হামলার জন্য কে তথ্য সরবরাহ করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, ‘অবশ্যই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে, ফলস্বরূপ শান্তিপূর্ণ রুশরা মারা যাচ্ছে। এর পরিণতি দেখতে হবে। কোনটি সঠিক সময় বলে দেবে।’