কি অসাধারণ এক ম্যাচ! টি-টোয়েন্টির উৎসবের সব উপাদানই ছিল এই ম্যাচে। টানটান উত্তেজনা, মুহূর্তে মুহূর্তে ম্যাচের রঙ পরিবর্তন। সব কিছুই ছিল। শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে পিএসএল ফাইনালে লাহোর কালান্দার্সকে শিরোপা এনে দিলেন জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার সিকান্দার রাজা।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স। জবাবে ব্যাট করতে নেমে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ১ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় লাহোর কালান্দার্স।
২০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারেই ৯৭ রান করে জয়ের পথে দারুণভাবে এগিয়েছিল লাহোর। কিন্তু পরের ৫ ওভারে লাহোরের রান অনেক কমে যায়। মাঝের এই ৫ ওভারে মাত্র ৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয় লাহোরের ব্যাটাররা।
শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৭১ রান। এ সময়ই ঘুরে দাঁড়ায় লাহোর। বিশেষ করে কুশল পেরেরা এবং ভানুকা রাজাপাকসে মিলে ১৬তম ওভার থেকে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন।
১৬.৪ ওভারে ১৪৫ রানের মাথায় ভানুকা রাজাপাকসে ব্যাক্তিগত ১৪ রানের মাথায় আউট হয়ে গেলে কুশল পেরেরা এবং সিকান্দার রাজা মিলে হাল ধরেন। দু’জন মিলে ২০ বলে গড়ে তোলেন ৫৯ রানের জুটি। সিকান্দার রাজা মাঠে নেমেই ঝড় তোলেন। মোহাম্মদ আমিরকে মোকাবেলা করে প্রথম দুই বলেই তোলেন ১০ রান।
শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান। কুশল পেরেরা এবং সিকান্দার রাজা মিলে ১৮তম ওভারে ১৬, ১৯তম ওভারে করেন ১৮ রান। ফলে শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ১৩ রান। ফাহিম আশরাফ প্রথম তিন বলে দিলেন ৫ রান। তবে কোনো বাউন্ডারি নিতে দিলেন না। চতুর্থ বলে সুযোগ পান সিকান্দার রাজা। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচকে নিয়ে আসেন হাতের মুঠোয়। ২ বলে ২ রান দরকার। সিকান্দার রাজা অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না। বাউন্ডারি মেরে দিলেন।
সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে পুরো লাহোর। রাতের লাহোর ভেদ করে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের গ্যালারির চারপাশ থেকে অসংখ্য আতশবাজির আলোর ঝলকানি চলতে থাকে। আলোকিত হয়ে ওঠে লাহোরে রাতের আকাশ। এরই মধ্যে জয়ের নায়ক সিকান্দার রাজাকে কাঁধে নিয়ে নাচতে থাকে সতীর্থরা।
এই ম্যাচে লাহোর দলে ছিলেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন। তবে ফাইনালের একাদশে সুযোগ পান শুধু রিশাদ। বল হাতে তিনি ৪২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ২৯ রান করা অভিষেক ফার্নান্দোর উইকেট নেন তিনি। যদিও ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি তাকে আর।
২০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন ফাখর জামান ও মোহাম্মদ নাইম। ৩.২ ওভারে ৩৯ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ১০ বলে ১১ রান করেন ফাখর জামান। মোহাম্মদ নাইম করেন ২৭ বলে ৪৬ রান। আবদুল্লাহ শফিক ২৮ বলে ৪১ রান করে আউট হন।
ব্যাট হাতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটার কুশল পেরেরা। ৩১ বলে ৬২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কার মার মারেন। ৭ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন সিকান্দার রাজা। ২টি করে বাউন্ডারি ও ছক্কা মারেন তিনি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান তোলে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স। ৪৩ বলে ৭৬ রান করেন হাসান নওয়াজ। এছাড়া অভিষেক ফার্নান্দো ২৯, ফাহিম আশরাফ ২৮,রাইলি রুশো ২২ ও দিনেশ চান্ডিমাল করেন ২২ রান। রিশাদের ১ উইকেট ছাড়াও ৩ উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, ২টি করে উইকেট নেন সালমান মির্জা ও হারিস রউফ।