কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ:
ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও ভাউচার তৈরি করে নওগাঁর মান্দা উপজেলার পানিয়াল আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ কায়মুল হক মন্ডল ১কোটি ৭১ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সাবাইহাট গ্রামের মৃত তাছের আলী সরদারের ছেলে এবং কলেজটির ছাত্র অভিভাবক রেজাউল করিম গত ৬ জুন জেলা প্রসাশক বরাবর এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ১ আগস্ট গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ও  রেজুলেশন ছাড়া তৎকালীন সভাপতি কাঞ্চন কুমার প্রামানিককে না জানিয়ে অত্র কলেজের সঞ্চয়ী ব্যাংক ডিপোজিট হিসাব নং ১০০০০০৫২৩ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক,সাবাইহাট শাখা থেকে ৩৮১৪২৪৪ ও ৩৮১৪২৪৫ নং দুটি চেকের মাধ্যমে তিন লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। তৎকালীন সভাপতি কাঞ্চন কুমার প্রামানিক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত মে মাসে অত্র কলেজে কর্মচারী পদে জনৈক সবুর এবং শাহিনকে চাকুরী দিয়ে অধ্যক্ষ ২৮লক্ষ টাকা গ্রহন করেছেন। যা তারা বিভিন্ন জনের কাছে বেশ কিছু জমি বিক্রয় করে প্রদান করেছেন। এটাকা সংগ্রহে তারা পার্শ্ববর্তী শিংগা গ্রামের জনৈক এমদাদুল হকের নিকট ৪৭শতক জমি ১৫লক্ষ টাকার বিনিমিয়ে বিক্রয় করেছেন। শ্রীরামপুর গ্রামের ইনতাজ আলীর স্ত্রী আছিয়া বিবির নিকট ১৭ শতক জমি ১১লক্ষ টাকার বিনিময়ে এবং মাধায়পুকুর গ্রামের নাদিরা বেগমের নিকট ৫লক্ষ ৫০হাজার টাকার বিনিময়ে জমি বিক্রয় করেছেন। 

এছাড়া কলেজের ডিগ্রী বা ¯œাতক শ্রেনির শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগের সময় অধ্যক্ষ তাদের নিকট থেকে  ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিগ্রী কলেজে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক/কর্মচারী অভিভাবকদের জমি বিক্রয়ের বিস্তারিত তথ্য তার কাছে সংরক্ষিত আছে বলে রেজাউল করিম তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। রেজাউল করিম বলেন, আত্মসাতকৃত এসব টাকা দিয়ে অধ্যক্ষ রাজশাহীতে ৩কাঠা জমি ক্রয় করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। চলা ফেরার জন্য তিনি ব্যবহার করেন বিলাস বহুল মাইক্রোবাস।

কলেজের ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী জানান, গত ’১৭ সালের ১০ ও ১১ ডিসেম্বর এইচএসসি ফরম পুরনে বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেনন্দ্রনাথ সাহা, ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার সহ কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক, স্থানীয় জনসাধারন কলেজ চত্ত্বরে সমাবেশ করে এবং কলেজের মেইনগেটে তালা মারে। অধ্যক্ষ এখন পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসা পত্র বাবদ অতিরিক্ত ১হাজার টাকা করে জোর পূর্বক গ্রহন করে আত্মসাত করছেন। 

সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের দরিদ্র কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, গরীব ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ছেলে-মেয়ে এই কলেজে লেখাপড়া করেন। দরিদ্র মানুষের কষ্টের টাকা বর্তমান অধ্যক্ষ সরকারি পরিপত্র বহির্ভূতভাবে সেশন ফির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে ব্যক্তিগত গাড়ি-বাড়ি করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খোলার অভিযোগে একাধিক শিক্ষকের বেতন বন্ধ, শোকজসহ বিভিন্ন অজুহাতে সাময়িক বরখাস্ত করে  ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এ অধ্যক্ষ। 

সদ্য সাবেক সভাপতি কাঞ্চন কুমার প্রামানিক বলেন, অধ্যক্ষ মোঃ কায়মুল হক মন্ডল একজন অযোগ্য  অর্থলোভী ও দুর্নিতীবাজ। জাল জালিয়াতি করে তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়েছেন। তিনি ১৯৯৮ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামো যথাযথ ভাবে পাল না করে  নীতি বর্হিভূত ও অবৈধভাবে নিজে যোগদান করেছেন। এসব কারনে আমি তাকে একাধিকবার কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি এবং একবার তাকে বরখাস্ত করেছিলাম।

এসব বিষয়ে অধ্যক্ষ মোঃ কায়মুল হক মন্ডল বলেন, একটি মহল আমার নামে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এসব কুৎসা ছড়াচ্ছে। আমি কলেজের উন্নয়ন করছি একটি গোষ্ঠী তা মেনে নিতে পারছে না। তিনি বলেন, বেসরকারী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী কোন পদ্ধতিতে এবং কিভাবে নিয়োগ হয় সেটা আপনারা সবাই কমবেশি জানেন। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কলেজের উন্নয়নে প্রায় সকলেই কিছু ডোনেশন দিয়ে থাকেন। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সেসান ফিসহ যেসব টাকা নেওয়া হয় সেগুলো কলেজের উন্নয়নেই ব্যায় করা হয়। 

নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ বলেন, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।