ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিবের (মাঠ প্রশাসন) কক্ষে হট্টগোল-হাতাহাতিতে জড়ান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম (১৫৮০৬)।
 

ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটির শুনানিতে গিয়ে নিজের পরিচিতি নম্বরের (আইডি) বদলে তাঁর ব্যাচমেট মোহাম্মদ সাইফুল হাসানের (১৫৭০১) নাম ও আইডি বলে জবানবন্দি দেন সাইফুল ইসলাম।

অথচ সাইফুল হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না।

 

অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সাইফুল হাসানসহ আট কর্মকর্তার গুরুদণ্ড দেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে গুরুদণ্ডের তালিকায় নিজের নাম দেখে উদ্বিগ্ন ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন নিরপরাধ সাইফুল হাসান। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি গত ৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন দিয়েছেন।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিসি নিয়োগসংক্রান্ত কোনো ঘটনায় আমি উপস্থিত ছিলাম না। ফলে কমিটি আমাকে শুনানিতে ডাকেনি, তাই কোনো জবানবন্দিও দিইনি। বরং হট্টগোলের ঘটনায় উপস্থিত আমার ব্যাচমেট সাইফুল ইসলাম সম্প্রতি উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ভিডিওতে তাঁর ছবিও রয়েছে।

 
 

হতে পারে তিনি তদন্ত কমিটির শুনানিতে নিজের আইডি না বলে আমার নাম ও আইডি বলেছেন। ফলে কমিটি তাঁকে মনে করে আমার নাম ও আইডি নম্বরের বিপরীতে গুরুদণ্ডের সুপারিশ করেছে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আবেদনে সাইফুল হাসান বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আটজন উপসচিবকে গুরুদণ্ড প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে সাইফুল হাসানের নাম রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই।

 

ঘটনার দিন আমি সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তা ছাড়াও তদন্তকাজে আমাকে ডাকা হয়নি বা মৌখিক/লিখিত জবানবন্দি দিইনি। প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ (ভিডিওর স্ক্রিন শট সংযুক্ত) বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে অন্য একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, যার নাম সাইফুল ইসলাম (১৫৮০৬) এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি প্রদান করেছেন মর্মে জানতে পারি।

আমাকে ভিডিও ফুটেজে কোথাও দেখা যায়নি এবং দেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী ওই ঘটনায় উপস্থিত মো. সাইফুল ইসলাম তদন্তকাজে তাঁর জবানবন্দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নাম এবং আইডি নম্বর ব্যবহার করতে পারেন। এমতাবস্থায়, ডিসি নিয়োগের বিষয়ে হাতাহাতির ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং নিরপরাধ ব্যক্তি হিসেবে আমাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’  

তবে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম  কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আমাদের কাউকেই লিখিত নোটিশ করেনি। ব্যাচমেটরা জানালে প্রথম দিন আমরা চারজন শুনানিতে অংশ নিই। কমিটি আমাকে ২২ মিনিট জেরা করে, এমন প্রশ্ন করে, যা তাদের কার্যপরিধিতেই নেই। তারা কোথাও আমার সই বা স্বাক্ষর নেয়নি।

সুতরাং আমার নাম করিম বললে উনি রহিম লিখলে আমার কী করার আছে! আমি নিজের নাম, আইডি না বলে আরেকজনেরটা বলব আর কমিটি আমাকে ছেড়ে দেবে! তাহলে তারা কী ধরনের তদন্ত করল?’

তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যসচিব আকমল হোসেন আজাদ দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।