ঢাকা: করোনাকালে বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকা ও সিউলের মধ্যে জিন এয়ার অনিয়মিত ফ্লাইট শুরু করলেও এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার রাতেও সিউল থেকে একটি ফ্লাইট যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছয় এবং রাতেই যাত্রী নিয়ে ফিরে যায়। তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না থাকলেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত টিকিট বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।
সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত অভিযোগে এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, প্রতি টিকিটের বিপরীতে এই ফি সর্বনিম্ন ১০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, কোনো অবস্থাতেই বাণিজ্যিকভাবে এই ফ্লাইট পরিচালিত হবে না। কিন্তু জিন এয়ার এসব শর্ত তো মানেনি, উল্টো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে রয়ালিটি ফি না দিয়েই ডিপ্লোম্যাটিক ফ্লাইটের আড়ালে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
জানা যায়, আইন ও শর্তের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী এই অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছিল জিন এয়ারকে।
অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে এবং এই প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও জিন এয়ারকে বাণিজ্যিক চার্টার ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-সিউল নিয়মিত ফ্লাইট থাকলেও গত ২৩ অক্টোবর একটি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য জিন এয়ারকে অনুমতি দেওয়া হয়।
এতে আরো বলা হয়, সর্বশেষ গতকাল সোমবারও একটি ফ্লাইটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩৮ মিনিটে ফ্লাইট সিউল থেকে ছেড়ে আসে। আবার রাতেই যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজটি ফিরে যায়। অর্থাৎ অনুমতি না থাকলেও টিকিট বিক্রিসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল তাদের। তবে আর কোনো ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না থাকলেও ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে টিকিট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। শিডিউল ফ্লাইটের আদলে ফ্লাইট পরিচালনার তথ্য দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা করছে জিন এয়ার।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থায় যখন দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সাধারণত ডিপ্লোম্যাটিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। করোনার শুরুর দিকে ঢাকা ও সিউলের মধ্যে এমন ফ্লাইটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই প্রয়োজন তিন বছর ধরে থাকতে পারে না। গত তিন বছরে জিন এয়ারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অন্তত পাঁচ মিলিয়ন ডলার বা ৫৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এবং বিমান বাংলাদেশ এই অর্থ পেত।
লো কস্ট বাজেট এয়ারলাইনস হয়েও চড়া মূল্যে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে জিন এয়ার উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, ঢাকা থেকে সিউলের একক সরাসরি যাত্রায় যেখানে ৫৭ হাজার টাকায়ও টিকিট পাওয়া যায়, সেখানে জিন এয়ারের টিকিটের দাম শুরু হয় ৭৭ হাজার টাকা থেকে। এ ছাড়া চার্টার ফ্লাইটের জন্যও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রাপ্য রয়ালটি ফি দিচ্ছে না জিন এয়ার। তা ছাড়া শুধু বোয়েসেলের কর্মী পরিবহনের কথা বলে সাধারণ বাণিজ্যিক প্যাসেঞ্জার পরিবহন করায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাকালের ব্যবস্থা এখনো চালু রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। অভিযোগ পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে।’