শিব্বীর আহমেদ: রাজধানী ঢাকার কথা যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে বর্তমানে বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য একটি নগরীর এটি এবং এর আধুনিকায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সুউচ্চ অট্টালিকার কথা ভাবলেই সবার মাথায় আসে বুর্জ খলিফা, চীনের সাংহাই টাওয়ার, সৌদি আরবের মক্কা ক্লক টাওয়ার, আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় টাওয়ার হলো দুবাইয়ের নান্দনিক বুর্জ আল খলিফা। যদি এমনই কোন একটি স্থাপনা বাংলাদেশের মতো দেশে তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয় তাহলে কি সেটি বিলাসিতা? একটি দেশের আধুনিকায়ন করতে যেমন সুষম উন্নয়ন করতে হয় ঠিক তেমনি একটি মেজর সিটি থাকা লাগে যেটি দিন শেষে ওই নির্দিষ্ট শহরকে নির্দিষ্ট একটি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করবে বহির্বিশ্বে।

মেট্রোরেল, বিআরটি, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উন্নয়ন, ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রভৃতি অবকাঠামো উন্নয়নে যখন বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান হবে তখন এই আধুনিকায়নে একটি নির্দিষ্ট শহরকে ফুটিয়ে তুলবে যা দিনশেষে আধুনিক ঢাকাকে সারবিশ্বে তুলে ধরবে। একটি দেশের অর্থনীতি টেকসই নাকি ভংগুর তাও নির্ভর করে এ সব মহা প্রকল্পের ওপর। দুবাই বা চীন কিংবা আমেরিকার অর্থনীতির উন্নতির পেছনে এ সব প্রকল্পের অবদান কম কিসে। নতুন কোনো বিনিয়োগকারী বা পর্যটক যখন বাংলাদেশ নিয়ে জানতে চাবে দিনশেষে এসকল অবকাঠামো তাদের আকৃষ্ট করবে বাংলাদেশ নিয়ে। বহির্বিশ্বে বর্তমানে হাজারো পর্যটক দুবাই কিংবা মালয়েশিয়া যায় শুধু বুর্জ খলিফা কিংবা পেটরনাস টুইন টাওয়ারের সঙ্গে একটি ছবি তুলতে! যুগের পরে যুগ এ সব অবকাঠামোই একটি শহরের পরিচয় বহন করে এবং হয়ে ওঠে নান্দনিকতা ও আভিজাত্যের প্রতীক।
বাংলাদেশেও এমন একটি মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার’ প্রকল্পটি গড়ে উঠছে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে যেখানে এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে একটি স্মার্ট সিটি। তিনটি সুউচ্চ টাওয়ারকে কেন্দ্র করে থাকছে নান্দনিক স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, বিজনেস সেন্টার, আধুনিক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি।

প্রকল্পের মূল আকর্ষণ ‘বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার’ এ থাকছে যথাক্রমে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ৫২তলা, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ৭১তলা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিগ্যাসি স্মরণে ১১১ তলা বিল্ডিং। লিগ্যাসি টাওয়ারের ৯৬তম তলায় খাকবে একটি মিউজিয়াম। এই তিন টাওয়ারের চারদিকে আরো ৪৯ তলার ৪০টি ভবন নির্মিত হবে। যদিও পূর্বের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রæপের পরিবর্তন হলে তাদের ডিজাইন করা ১৪২ তলার টাওয়ার ‘৭১’ এ পরিবর্তন আনা হয়। এছাড়াও প্রশাসনিক কারণ এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অসম্মতিও ডিজাইন পরিবর্তনে দায়ী ছিল।

বিশ্বের সর্বাধুনিক সোলার গ্লাসে তৈরি এ ভবনগুলো হবে পরিবেশবান্ধব। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিভিন্ন ইউটিলিটির জন্য করা হবে কমন ডাক্ট ব্যবস্থা। চীনের গ্রেট ওয়ালের আদলে তৈরি হবে ভবনগুলোর সীমানা প্রাচীর, যেখানে থাকবে ওয়াক ওয়ে। আর অভ্যন্তরীন যাতায়াতের জন্য পরিবেশ বান্ধব ইলেকট্রনিক বাস এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াক ওয়েও থাকবে এখানে।

দূর্বার গতীতে এগিয়ে চলছে এই প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের মাটি পরীক্ষা, যানবাহন ব্যবস্থপনাসহ বিভিন্ন সমীক্ষার প্রতিবেদন এরইমধ্যে রাজউকে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের খসড়া মাস্টার প্লান ও ডিজাইনও নির্ধারিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্মার্ট ও নান্দনিক এই টাওয়ারের ডিজাইনের জন্য সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে রাজউক। বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ারের আর্কিটেক্ট হিসেবে পৃথিবী বিখ্যাত এবং কোরিয়ার শ্রেষ্ঠ আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান হেরিম আর্কিটেক্ট কাজ করছে। আগামী বছর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালে।

বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে যথাক্রমে শিকদার গ্রæপের সিস্টার কোম্পানি পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড এবং জাপানের কাজিমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হওয়া শুরু করবে এবং বর্তমানে প্রকল্পের পাইলিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে এবং প্রকল্পটির তদারকির দায়িত্বে আছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরের ১১১ নম্বর রোডে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিকে (সিবিডি) ১১৪ একর জমি জুড়ে বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা এবং এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফিলিপাইন। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয়ের ৬০ হাজার কোটি টাকা যোগাড় করা হয়েছে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা প্রকাশ পাবে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।